আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-
মঙ্গলবার, ০৩ জুন ২০২৫ ইং ০৯:০০ পিএম.
ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে কুড়িগ্রামে স্থায়ী ও অস্থায়ী গবাদি পশুর হাট বসেছে। গরু-ছাগল বেচাকেনার ধুম পড়েছে হাটগুলোতে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে জেলায় এবার স্থায়ী অস্থায়ী মিলে মোট ২৯টি গরু-ছাগলের হাট বসেছে। কুড়িগ্রাম সদর, যাত্রাপুর হাট, মোগলবাসা হাট, কাঁঠালবাড়ি হাট, ভুরুঙ্গামারী হাট এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
এছাড়াও কিছু এলাকায় অনুমোদনবিহীন ছোট ছোট হাট গড়ে উঠেছে। অধিকাংশ হাটে বাঁশের কাঠামো তৈরি হয়েছে। বিক্রেতারা ও কৃষি খামার মালিকেরা তাদের স্থান চিহ্নিত করেছেন সাইনবোর্ড লাগিয়ে।
কুড়িগ্রামের সবচেয়ে ঐতিয্যবাহী হাট যাত্রাপুর হাট। কয়েক হাজার গরুর আমদানি হয় এখানে। ঈদের শেষ মূহুর্তেও চলে এ হাটের বেচাকেনা। সপ্তাহে শনিবার ও মঙ্গলবার দুদিন বসে এ গরুর হাট।
নদী বিধৌত ও চরাঞ্চলের পাশে এ হাট হওয়ায় দেশি গরুর সমাগম বেশি হয়। এছাড়া প্রাকৃতিক খাবার খেয়ে পালন করা দেশী গরু ছাগল এবং খামারিদের পালন করা ফ্রিজিয়ান, অস্ট্রেলিয়ান গরুও বিক্রি হয়। এ হাটে গরু আমদানি-রপ্তানিও বেশ ভালো হয়।
যাত্রাপুর হাটের খামারি লোকমান আলী বলছেন, “কয়েক বছর ধরে গো খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। কোনো কোনো খাদ্যের দাম দ্বিগুণ হয়েছে। এতে গরু পালনে ব্যয় বেড়েছে। তাই গরুগুলোর দাম বেশ বেশি।”
যাত্রাপুর হাটে গরু নিয়ে আসা আমজাদ হোসেন বলছিলেন, “এবারের গরুর দাম কম। উপায় না পেয়ে বিক্রি করছি। যে গরুর দাম ১ লাখ সেই গরু ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।”
ক্রেতা মোখলেছুর রহমান বলছিলেন, “গরুর দাম বেশি। বাজেটের চেয়ে ৫-৬ হাজার টাকা বেশি খরচ করতে হচ্ছে। বাজারে অন্যান্য জিনিসের দামও চড়া, তাই সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে।”
জেলার স্থায়ী ও অস্থায়ী পশুর হাটগুলোর সার্বিক নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। চাঁদাবাজি ও প্রতারণা প্রতিরোধে সেনাবাহিনী টহল বসিয়েছে। জাল টাকা প্রতিরোধে সোনালি ব্যাংক টাকা পরীক্ষা ও গণনার জন্য একাধিক বুথ বসিয়েছে।
যাত্রাপুর হাটের ইজারদার মো. রহিম উদ্দিন হায়দার রিপন বলেন, “এবার হাটে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুবই ভালো। এখন পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে নাই। পুলিশ প্রশাসন ও সেনাবাহিনী সব সময় তদারকি করছে।”
সোনালি ব্যাংক কর্মকর্তা আব্দুর রশিদ বলেন, “দেশের প্রান্তিক জেলা কুড়িগ্রাম। এখানকার ঐতিয্যবাহী হাট যাত্রাপুর। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় আমরা এসেছি। ক্রেতা-বিক্রেতা কেউ যেন প্রতারণার স্বীকার না হয়। জাল নোট সনাক্ত করার জন্যই এই হাটে বুথ স্থাপন করে বসেছি।”
কুড়িগ্রাম সদর থেকে গরু কিনতে এসেছেন রেজাউল করিম। তিনি বলেন, “গরু কিনতে এসে দেখি, আমদানি অনেক। বিক্রেতারা দাম বেশি হাকাচ্ছে। আশা করছি, সাধ্যের মধ্যে গরু কিনতে পারবো।”
গরু বিক্রেতা আয়নাল হক বলেন, যাত্রাপুর হাটে তিনি প্রায় ৪ মণ ওজনের দেশি গরু এনেছেন। দাম চাইছেন ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা। ক্রেতারা এখন পর্যন্ত ৮০-৯০ হাজার দাম বলেছে।
“হাটে ক্রেতার সমাগম ভালো আশা করছি লাভজনক দামে গরুটি বিক্রি করতে পারবো।” বলছিলেন তিনি।
গরুর পাইকার আলম সর্দার বলেন, “আমি এ পর্যন্ত আটটি গরু কিনেছি। এগুলো বয়স রঙ ভেদে ৭০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা। আশা করছি, ঢাকায় বিক্রি করে লাভ হবে।”
স্থানীয় ইউপি সদস্য রহিম উদ্দিন হায়দার বলেন, “হাটে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুবই ভালো। ক্রেতা বিক্রেতায় ভরপুর। এখন পর্যন্ত কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে নাই। পুলিশ প্রশাসন ও সেনাবাহিনী সব সময় তদারকি করছে।”
কুড়িগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. হাবিবুর রহমান বলেন, এ বছর জেলায় স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে ২৯টি পশু হাট রয়েছে। এবার জেলায় কেরবানিযোগ্য পশু প্রস্তুত আছে ২ লাখ ৮০ হাজার ৪৮৬টি। জেলায় চাহিদা রয়েছে ২ লাখ ২২ হাজার ৪৮০টি। উদ্ধৃত্ত পশুর সংখ্যা ৫৭ হাজার ৬৪৬টি। সেগুলো অন্য জেলায় প্রেরণ করা যাবে। প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকে জেলার ৯ উপজেলায় ভেটেরিনারি টিম গঠন করা হয়েছে।
উপ-সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা খান বলেন, কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার প্রাণী সম্পদের পক্ষ থেকে ভেটেনারি মেডিকেল টিম যাত্রাপুরসহ বিভিন্ন হাটে অবস্থান করছে। গবাাদি পশুগুলোর বিভিন্ন সংক্রামক রোগ হিট স্ট্রোক রোগের চিকিৎসার জন্য্য সার্বক্ষণিক চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক নুসরাত সুলতানা বলেন, “ঈদুল আজাহাকে সামনে রেখে জেলার বিভিন্ন উপজেলা স্থায়ী ও অস্থায়ী ভাবে গরুর হাট বসেছে। অপ্রীতিকর ঘটনা জাল নোট সনাক্ত, চুরি কিংবা অতিরিক্ত হাসিল আদায়ের ঘটনা যাতে না ঘটে সে ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।”
Leave a Reply