আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:-
স্বাধীনতার ৫২ বছর পর এমপি পেলেন উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামের সীমান্তঘেষা ফুলবাড়ী উপজেলাবাসী। রোববার (৭ জানুয়ারি) ডা. হামিদুল হক খন্দকারের জয়ের পর থেকে উপজেলার প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় বইছে খুশির জোয়ার।
জানা গেছে, কুড়িগ্রাম সদর, রাজারহাট ও ফুলবাড়ী উপজেলা নিয়ে কুড়িগ্রাম-২ সংসদীয় আসন। আসনটি বরাবরের মতো জাতীয় পার্টির দখলে থাকায় জাতীয় দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে সাবেক এমপি পনির উদ্দিন আহমেদকে প্রার্থী দিয়েছেন দলটি।
জাতীয় পাটির দখলে থাকা কুড়িগ্রাম-২ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. হামিদুল হক খন্দকার। নির্বাচনে এসেই বাজিমাত করেছেন তিনি।
স্বাধীনতার ৫২ বছর পর কুড়িগ্রাম ২-আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ডা. হামিদুল হক খন্দকার জাতীয় পাটির প্রার্থী সংসদ সদস্য পনির উদ্দিন আহমেদের (লাঙ্গল) সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়ে এক ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। ৭ জানুয়ারি রাতে বেসরকারিভাবে বিজয় নিশ্চিত হওয়ার পর থেকে সদর, রাজারহাট ও ফুলবাড়ীর জনসাধারণের মাঝে চলছে খুশির আমেজ।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, স্বাধীনতার ৫২ বছর পর ফুলবাড়ীবাসী একজন সংসদ সদস্য পেয়ে দলমত নির্বিশেষে সবার মাঝে বইছে উৎসবের আমেজ। সেই সঙ্গে সবার মুখে মুখে পিছিয়ে পড়া সীমান্তঘেষা ফুলবাড়ী উপজেলার ব্যাপক উন্নয়নের পাশাপাশি কুড়িগ্রাম সদর ও রাজারহাট উপজেলায় ব্যাপক উন্নয়নসহ চিকিৎসা খাতেও আসবে আমূল পরিবর্তন। অন্যদিকে জাতীয় পাটির প্রার্থী পনির উদ্দিন আহমেদ স্বতন্ত্র প্রার্থী ডা. হামিদুল হক খন্দকারের কাছে ব্যাপক পরাজয়ের মধ্য দিয়ে কুড়িগ্রাম-২ আসনটি জাতীয় পাটির চিরবিদায় হয়েছে বলে অনেকেই জানিয়েছেন।
উপজেলার কুরুষাফেরুষা গ্রামের ৭৭ বছরের বৃদ্ধা আরতী বালা রায় জানান, অনেকবার লাঙ্গলে ভোট দিয়েছি। এবার জায়গার সন্তান এমপি পদে দাঁড়িয়েছে, তাই ভোট তাকে দিয়েছি। এই বয়সে এসে আমার এলাকায় একজন এমপি পেলাম খুবই ভালো লাগছে।
উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের কাশিয়াবাড়ী এলাকার যুবক হাবিবুর রহমান হাবীব বলেন, ৭ জানুয়ারি থেকে এতো খুশি লাগছে, বলার ভাষা নেই। সবথেকে বড় কথা সীমান্তঘেষা উপজেলায় একজন সংসদ সদস্য পেলাম। এটা অনেক বড় আনন্দের বিষয়। নবনির্বাচিত এমপি অন্যান্য উন্নয়নের পাশাপাশি বেকার তরুণ যুবদের উন্নয়নে কাজ করবে বলে আমার বিশ্বাস।
নাওডাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম বন্ধন বলেন, স্বাধীনতার ৫২ বছর পর আমরা আমাদের এলাকায় একজন সংসদ সদস্য পেলাম। এটা ফুলবাড়ীবাসীর জন্য অনেক বড় পাওয়া। এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে উপজেলা জুড়ে প্রতিটি মানুষের মাঝে এক খুশির জোয়ার বইছে। আর যিনি এমপি হয়েছেন তিনি একজন গুণী মানুষ। তিনি এমপি হওয়ার আগে থেকে ফুলবাড়ীসহ তিন উপজেলায় শতশত মসজিদ-মন্দিরে অনেক অনুদান দিয়ে এবং অনেক মানুষের উপকার করেছে। এখন তো তিনি সংসদ সদস্য হয়েছেন আশাকরি, ফুলবাড়ীসহ তিন উপজেলায় চিকিৎসা সেবাসহ ব্যাপক উন্নয়ন করবে বলে আমাদের বিশ্বাস। তবে সীমান্তঘেষা ফুলবাড়ীর কৃতি সন্তান হয়ে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পাটির প্রার্থী সংসদ সদস্যকে বিপুল ভোটের মাধ্যমে পরাজিত করেছেন, এটা ইতিহাস হয়ে থাকবেন। জাতীয় পাটির পরাজয়ের মধ্য দিয়ে আমি মনে করি কুড়িগ্রাম-২ আসন থেকে জাতীয় রাজনীতি চিরবিদায় নিয়েছেন।
ফুলবাড়ী প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও সিনিয়র সাংবাদিক আব্দুল আজিজ মজনু জানান, ডা. হামিদুল হক খন্দকার যেভাবে স্বাস্থ্যসেবাসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে মানুষের মন জয় করে নিয়েছে বলে তিনি আজ এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি গরীব মানুষের জন্য কাজ করে গেলে আগামী দিনে ঠিক এমনভাবে সমর্থন পাবেন। আমার ব্যক্তিগত একটি আশা রয়েছে, নবনির্বাচিত এমপি যদি ফুলবাড়ীতে ইমিগ্রেশনসহ অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘোষণার জন্য ভূমিকা রাখেন, তাহলে দারিদ্রপীড়িত কুড়িগ্রাম জেলাসহ সীমান্তবর্তী উপজেলাটি অনেকাংশে এগিয়ে যাবে।
নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. হামিদুল হক খন্দকার বলেন, নির্বাচনের আগে জনগণের মাঝে যেগুলো প্রতিশ্রুতি দিয়েছি তার সবগুলো বাস্তবায়ন করা হবে। উন্নয়নের পাশাপাশি কুড়িগ্রাম জেলা শহরে একটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়সহ ফুলবাড়ী ও রাজারহাট উপজেলার স্বাস্থ্যখাতে বিশেষভাবে গুরুত্ব রাখবেন।
উল্লেখ্য, ৭ জানুয়ারি কুড়িগ্রাম-২ (কুড়িগ্রাম সদর, ফুলবাড়ী ও রাজারহাট) আসনে বিজয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ডা. হামিদুল হক খন্দকার ট্রাক প্রতীকে তিনি পেয়েছেন ১ লাখ ১ হাজার ৯২৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পাটির প্রার্থী ও সাবেক এমপি পনির উদ্দিন আহমেদ লাঙ্গল মার্কা নিয়ে পেয়েছেন ৪৭ হাজার ১০০ ভোট।
Leave a Reply