আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-
১৪ ডিসেম্বর ২০২৩ ইং
কুড়িগ্রাম জেলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ কুড়িগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তিতে জালিয়াতির সত্যতা পেয়েছে শিক্ষা বিভাগ । বিধি বহির্ভূতভাবে সাত শিক্ষার্থী ভর্তি করায় স্কুলটির প্রধান শিক্ষক জিয়াসমিন আরা হক’কে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)।
পত্র প্রাপ্তির তিন কর্মদিবসের মধ্যে মাউশির মহাপরিচালক বরাবর শোকজের জবাব দিতে বলা হয়েছে । কুড়িগ্রাম জেলা শিক্ষা অফিসার (ডি.ই.ও) মো. শামসুল আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন । তিনি প্রধান শিক্ষকের শোকজের পত্র প্রাপ্তির বিষয়টিও নিশ্চিত করেছেন ।
এর আগে স্কুলটিতে ভর্তি জালিয়াতি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় । এরপরই নড়েচড়ে বসে মাউশিসহ স্থানীয় প্রশাসন । পরে মাউশির নির্দেশে অভিযোগের তদন্ত করেন ডি.ই.ও । তদন্তে বিধি বহির্ভূতভাবে শিক্ষার্থী ভর্তির সত্যতা পান তিনি । পরে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা রংপুর কার্যালয়ের উপ-পরিচালকের মাধ্যমে মাউশির মহাপরিচালক বরাবর পাঠানো হয় । প্রতিবেদন পাওয়ার পরই প্রধান শিক্ষককে শোকজ করে মাউশি ।
মাউশির সরকারি মাধ্যমিক শাখার সহকারী পরিচালক-১ দুর্গা রানী শিকদার স্বাক্ষরিত ১৩ ডিসেম্বর তারিখের শোকজপত্রে বলা হয়েছে, ‘জালিয়াতির মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তির বিষয়ে প্রাপ্ত তদন্ত প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিধি বহির্ভূতভাবে সাত জন শিক্ষার্থী ভর্তি করায় কেন আপনার বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না তা পত্র প্রাপ্তির তিন কার্য দিবসের মধ্যে মহাপরিচালক, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর বাংলাদেশ, ঢাকার দফতরে দাখিল করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো ।’ ডি.ই.ও কুড়িগ্রামকে প্রাপকের পত্র প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে ।
এর আগে প্রতিনিধির কাছে তালিকা বহির্ভূত শিক্ষার্থী ভর্তির বিষয়টি অস্বীকার করেছিলেন প্রধান শিক্ষক জিয়াসমিন আরা হক । বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ওই সাত শিক্ষার্থীকে বিধি বহির্ভূতভাবে ভর্তি করা হয়েছিল বলে স্বীকার করে বলেন, ‘ বৃহস্পতিবার সকালে শোকজপত্রটি হাতে পেয়েছি । তবে এখনও জবাব দিইনি । ব্যস্ততার কারণে এ নিয়ে ভাবার সময় পাইনি ।’
জালিয়াতির মাধ্যমে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের ভর্তি বাতিল করা হয়েছে বলে দাবি করেন অভিযুক্ত এই প্রধান শিক্ষিকা । তবে কুড়িগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ওই শিক্ষার্থীদের ভর্তি বাতিল সংক্রান্ত কোনও নোটিশ প্রকাশ করা হয়নি ।
প্রসঙ্গত, কুড়িগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ২০২৪ সালের জন্য ষষ্ঠ শ্রেণিতে প্রভাতী ও দিবা শিফটে ক ও খ শাখা মিলে মোট ২২০ জন শিক্ষার্থী ভর্তির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় । সে অনুযায়ী কেন্দ্রীয় লটারির মাধ্যমে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের তালিকা প্রকাশ করা হয় । গত ৩ ডিসেম্বর ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হয় । ভর্তি কার্যক্রমের প্রথম দিনেই প্রধান শিক্ষক তাড়াহুড়ো করে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ৬ জন ও নবম শ্রেণিতে ১ জন শিক্ষার্থীকে ভর্তির সুপারিশ করেন । কিন্তু তাদের কেউই লটারিতে ভর্তির সুযোগ পায়নি । এমনকি ১ জন শিক্ষার্থী অনলাইনে আবেদনও করেনি । ওই সাত শিক্ষার্থীর মধ্যে ষষ্ঠ শ্রেণির ৪ জন শিক্ষার্থী কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের ৪ শিক্ষকের সন্তান । ভর্তি কমিটির সদস্য শিক্ষকরা এতে আপত্তি জানালে প্রধান শিক্ষক জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলে নিয়েছেন জানিয়ে তাদের ভর্তি করাতে বলেন । পরে ওই ৭ জন শিক্ষার্থীর ৬ জনকে প্রভাতী শিফটে ষষ্ঠ শ্রেণির ‘ক’ শাখায় এবং অপর ১ জনকে নবম শ্রেণিতে ভর্তি করা হয় ।
Leave a Reply