আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:-
সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে নদীর তলদেশ দিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ পৌঁছে গেছে কুড়িগ্রামের ৫৭টি দুর্গম চরে। কিছুদিন আগেও এসব চরের মানুষের একমাত্র ভরসা ছিল কুপি আর হ্যারিকেনের আলো। তবে বদলে গেছে সেই দিন, এখন বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত এসব চর। এতে করে খুশি চরবাসী।
ধরলা, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমোরসহ ১৬টি নদ-নদী বেষ্টিত জেলা কুড়িগ্রাম। জানা গেছে, এসব নদীর তলদেশ দিয়ে ৬০ কিলোমিটার সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে ২১টি পয়েন্টে সাবমেরিন ক্যাবল সংযোগ দেওয়া হয়েছে। পরে ৫৭টি চরে ৪৫০ কিলোমিটার বিদ্যুৎ লাইন স্থাপন করে কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। এতে ব্যয় হয়েছে ১৬৫ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে এসব চরে প্রায় ১৮ হাজার পরিবার বিদ্যুৎ সংযোগ পেয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, দুর্গম চরাঞ্চলগুলোতে বিদ্যুতের পাশাপাশি চলে এসেছে ডিস লাইন। যার ফলে প্রতিটি বাড়ি বাড়ি টেলিভিশনসহ ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী ব্যবহার করছে চরবাসী। এক সময় তাদের মোবাইল, চার্জার লাইট চার্জ দিতে যাত্রাপুর ও কুড়িগ্রাম শহরে যেতে হতো। এখন তারা বাড়িতে বসেই পাচ্ছেন বিদ্যুতের সকল সুবিধা। ডিজেল চালিত স্যালো মেশিনের পরিবর্তে এখন বিদ্যুতিক সেচ দিয়ে করতে পারবেন চাষাবাদও। এতে করে উন্নয়নের ধারায় এগিয়ে যেতে পারবেন বলে আশা চরবাসীদের।
ছবি সংগ্রহীত
কুড়িগ্রাম জেলার সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকার চর ভগবতিপুরের বাসিন্দা আমজাদ হোসেন (৬৫)। তিনি বলেন, ‘জীবনে ভাবতে পারি নাই জীবদ্দশায় আমাদের এই চরে বিদ্যুতের আলো দেখতে পাব। এখন বিদ্যুৎ পেয়েছি। আমরা খুব খুশি। তবে বর্তমানে বিদ্যুতের ঘন ঘন লোড শেডিং দেওয়া হচ্ছে। লোড শেডিং কমালে ভালো হয়।’
একই চরের বাসিন্দা এছাহাক আলী বলেন, ‘আগে আমাদের মোবাইল চার্জ দিতে যাত্রাপুরে যেতে হতো। এখন বাড়িতেই চার্জ দিতে পারছি। টেলিভিশন দেখছি। এই বিদ্যুৎ সংযোগ সেচ পাম্প লাগিয়ে আমরা জমিতে চাষাবাদ করতে পারব। আগে বেশি দামে ডিজেল কিনে স্যালো মেশিনে জমি আবাদ করতাম। এখন বিদ্যুতের মোটর দিয়ে করতে পারব। এতে উৎপাদন বেশি হবে।’
চরাঞ্চলের বাসিন্দারা জানান, বর্তমানে বৃষ্টি কম হওয়ায় সেচ দিয়ে আমন আবাদ করতে হচ্ছে। এদিকে লোড শেডিং বেশি হওয়ায় সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
উলিপুর উপজেলার বেগমগন্জ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বাবলু মিয়া বলেন, ‘আমার ইউনিয়নটি পুরোটাই চরাঞ্চলে। এখানে যে বিদ্যুৎ সংযোগ হবে তা কখনো কল্পনাও করতে পারি নাই। এখন আমার ইউনিয়নের সকল চরেই বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। এতে করে চরাঞ্চলের পরিবারগুলোর ছেলে-মেয়েরা রাতে ভালোভাবে লেখাপড়া করতে পারবে। চরের কৃষকরা সেচ দিয়ে জমি চাষ করতে পারবেন। চরাঞ্চলের মানুষ উন্নতি করতে পারবেন।’
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকার চরাঞ্চলে বিদ্যুতের সংযোগ দিয়েছে সরকার। আমি মনে করি এতে করে চরাঞ্চলের মানুষজন বিদ্যুৎ সেচ দিয়ে ভালোভাবে ফসল ফলাতে পারবেন। পাশাপাশি তাদের জীবন মানের উন্নয়ন হবে।’
কুড়িগ্রাম-লালমিনরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মো. মহিতুল ইসলাম বলেন, ‘ঘরে ঘরে শতভাগ বিদ্যুৎ পৌঁছানোর সরকারি ঘোষণার অংশ হিসেবে কুড়িগ্রামের দুর্গম চরাঞ্চলগুলোতে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত কুড়িগ্রাম সদর, নাগেশ্বরী, ভুরুঙ্গামারী, রাজারহাট ও উলিপুর উপজেলার ৫৭টি চরের ১৮ হাজার পরিবারকে বিদ্যুৎ সংযোগের আওতায় আনা হয়েছে। আর যেখানে লাইন টানা সম্ভব হয়নি সেখানেও সোলার প্যানেলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’
ছবি সংগ্রহীত
কুড়িগ্রাম জেলার চরাঞ্চলগুলোতে বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ শুরু হয় ২০২১ সালে শুরুতে এবং তা শেষ হয় ২০২২ সালের জুনের আগে। বিদ্যুৎ সংযোগ পেয়ে অত্যন্ত খুশি কুড়িগ্রামের দুর্গম চরাঞ্চলের মানুষজন। এতে করে শহরাঞ্চলের পাশাপাশি চরাঞ্চলগুলোও উন্নয়নের ছোয়ায় দেশের অর্থনীতিতে ভুমিকা রাখতে পারবে বলে আশা করছেন তারা।
Leave a Reply