আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-
বৃহস্পতিবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৪ ইং ১:৩৯ পিএম.
কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার মশালের চরের গৃহবধূ জরিনা বেগম (২৯)। গত বছরের এক রাতে প্রসববেদনা উঠলে স্বজনেরা স্থানীয় এক দাইকে (অপ্রশিক্ষিত) ডেকে আনেন। দাই রাতভর চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। পরদিন সকালে স্থানীয় এক পল্লী চিকিৎসককে ডাকা হয়। তিনি এসে জরিনাকে ‘অক্সিটোসিন’ ইনজেকশন দেন। এর ১০ মিনিট পর মৃত সন্তান প্রসব করেন জরিনা।
গত বছরের ২৮ জানুয়ারি সকাল ১০টায় প্রসববেদনা শুরু হয় উলিপুরের সাহেবের আলগা ইউনিয়নের গাঙচিলা গ্রামের সাজেদা বেগমের (১৮)। দাই ও পল্লিচিকিৎসক দিনভর চেষ্টা চালিয়ে বাড়িতে স্বাভাবিক প্রসব করানোর চেষ্টা করেন। একসময় ব্যথা কমে গেলে পল্লিচিকিৎসক ‘অক্সিটোসিন’ ইনজেকশন দেন। তবুও কাজ হয় না। একপর্যায়ে ‘সন্তান উল্টে আছে’ জানিয়ে সাজেদাকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে বলেন পল্লী চিকিৎসক। দুর্গম চর থেকে নৌকায় শহরে নিতে নিতে রাত হয়ে যায়। হাসপাতালের মাত্র ৫০০ গজ দূরে সন্তান গর্ভে থাকতেই মারা যান সাজেদা।
১৭ মে বিকেল পাঁচটা। নাসরিন বেগমের (২৭) প্রসববেদনা শুরু হয়। তড়িঘড়ি করে স্থানীয় এক পল্লিচিকিৎসককে ডেকে আনেন স্বামী। ব্যথা কম শুনে পরীক্ষা ছাড়াই ‘অক্সিটোসিন’ ইনজেকশন দিয়ে দেন পল্লী চিকিৎসক। কিছুক্ষণ পরই নাসরিনের খিঁচুনি শুরু হয়। অবস্থার উন্নতি না দেখে আধা ঘণ্টার মধ্যে দুই দফায় আরও পাঁচটি ইনজেকশন দেন। শেষে অবস্থা বেগতিক দেখে নাসরিনকে হাসপাতালে নিতে বলেন পল্লিচিকিৎসক। নৌপথে হাসপাতালে নেওয়ার পথে নৌকায় ছেলেসন্তানের জন্ম দেন নাসরিন।
জরিনার সন্তান হারানো, সাজেদার মৃত্যু কিংবা নাসরিনের মৃতপ্রায় অবস্থার নেপথ্যে অপচিকিৎসা। প্রতিবছর অপচিকিৎসায় কুড়িগ্রামে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মা ও নবজাতকের মৃত্যু হচ্ছে। দেড় বছর ধরে জেলার ৬০০ মায়ের বিষয়ে এমন তথ্য পেয়েছে।
প্রসবের জন্য জরায়ুর প্রসারণ ঘটাতে, প্রসবের গতি বাড়াতে ও প্রসবের পর রক্তপাত বন্ধ করতে ‘অক্সিটোসিন’ ইনজেকশন ব্যবহৃত হয়। এটি পেশিতে বা শিরায় দেওয়া হয়। বাংলাদেশে বিভিন্ন ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানি বিভিন্ন নামে এটি বাজারজাত করে।
পল্লী চিকিৎসকদের অসচেতনতা ও অপচিকিৎসায় প্রসূতি মা ও নবজাতকের জীবন গুরুতর ঝুঁকিতে পড়ছে বলে মনে করেন কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের প্রসূতি বিশেষজ্ঞ নাসিমা খাতুন। তিনি বলেন, বেশির ভাগ পল্লী চিকিৎসক পরীক্ষা ছাড়াই সামান্য ব্যথা দেখলেই ‘অক্সিটোসিন’ ইনজেকশন দেন। অথচ চিকিৎসকদের নির্দেশনা ছাড়া এই ইনজেকশন দেওয়া নিষিদ্ধ। তাঁরা প্রসবকালীন সময়ে জরায়ু প্রসারণ, ভ্রূণের অবস্থান, হৃৎস্পন্দন ও মায়ের রক্তচাপ পর্যবেক্ষণের বিষয়টি জানেন না। পরীক্ষা ছাড়া অক্সিটোসিন ইনজেকশন দিলে জরায়ু ছিঁড়ে যেতে পারে, প্রস্রাবের থলি ফেটে যেতে পারে। এমনকি প্রতিবন্ধী নবজাতকের জন্ম বা প্রসূতি চিরতরে গর্ভধারণের ক্ষমতা হারাতে পারেন।
অক্সিটোসিন ব্যবহারের নির্দিষ্ট নিয়ম ও নির্দেশনা আছে জানিয়ে নাসিমা খাতুন বলেন, পল্লী চিকিৎসকেরা ইনজেকশনের সঙ্গে দেওয়া নির্দেশনাটাও পড়েন না। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অতিমাত্রায় ইনজেকশন দিয়ে বসেন। এতে প্রসূতির অবস্থা আরও জটিল হয়ে যায়। তখন হাসপাতালে নিলেও চিকিৎসকদের কিছুই করার থাকে না। জরিনা, সাজেদা ও নাসরিনের সঙ্গে এমনই হয়েছিল বলে তিনি ধারণা করেন।
বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের ব্যাপারীপাড়া নতুন চর এলাকা থেকে ধরলা নদী পাড়ি দিয়ে চিকিৎসা নিতে মোল্লারহাট এসেছেন কিছু নারী। বৃহস্পতিবার দুপুরে খুদিরকুটি এলাকার ছবি।
জেলায় পল্লী চিকিৎসকদের অক্সিটোসিন ইনজেকশনের ব্যবহার নিয়ে সরকারি স্বাস্থ্যসেবার দুই বিভাগ-জেলা সিভিল সার্জন ও পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের নির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। এ ব্যাপারে ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত দেড় বছর একটি জরিপ চালানো হয়। যেখানে প্রসূতি মায়ের ওপর কী পরিমাণ অক্সিটোসিন ইনজেকশন দেওয়া হয়, তার তথ্য সংগ্রহ করা হয়। দৈবচয়নের ভিত্তিতে নাগেশ্বরীর নুনখাওয়া, উলিপুরের বেগমগঞ্জ ও সাহেবের আলগা এবং সদর উপজেলার যাত্রাপুর ও ঘোগাদহ ইউনিয়নের ১২টি দ্বীপচরের ৬০০ নারীর ওপর চালানো জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, ৬০০ জনের মধ্যে ৯৯ প্রসূতিকে ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই অক্সিটোসিন ইনজেকশন দিয়েছেন পল্লী চিকিৎসকেরা। এতে প্রসবের সময় ৫৯টি নবজাতক ও ৬ প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে।
পল্লিচিকিৎসকদের চিকিৎসাবিদ্যার প্রাতিষ্ঠানিক কোনো ডিগ্রি নেই। অনেকে এসএসসি পর্যন্তও পড়াশোনা করেননি। কেউ তিন মাস মেয়াদি আরএমপি (রুরাল মেডিকেল প্র্যাকটিশনার) কোর্স, কেউ–বা চার মাসের এলএমএএফ (লোকাল মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ও ফ্যামিলি প্ল্যানিং) কোর্স করেছেন। কেউ আবার ডিপ্লোমা ইন মেডিকেল ফ্যাকাল্টি (ডিএমএফ) করে নিজেদের ‘ডাক্তার’ পরিচয় দেন। কুড়িগ্রামে সরকারি ও বেসরকারি প্রশিক্ষণকেন্দ্রের সংখ্যা কিংবা পল্লী চিকিৎসকদের সঠিক হিসাব কারও কাছে নেই। তাঁরা ব্যবস্থাপত্রে বড় বড় ডিগ্রি, চটকদার সাইনবোর্ড লাগিয়ে ব্যবসা চালিয়ে যান। সাধারণত তাঁদের সর্দি, কাশি, ঠান্ডা–জ্বরের মতো রোগের চিকিৎসা দেওয়ার কথা।
মশালের চরের জরিনা বেগমকে চিকিৎসা দিয়েছিলেন সফিকুর রহমান। তাঁর স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রাতিষ্ঠানিক কোনো শিক্ষা নেই। জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক ফজলু সাহেব তাঁর ‘ওস্তাদ’। তাঁকে দেখেশুনেই তিনি এই পেশায় এসেছেন। এ ছাড়া কয়েকটি সংস্থায় তিন থেকে সাত দিনের কর্মশালায় অংশ নিয়েছেন।
জাহাজের আলগা চরের পল্লী চিকিৎসক আবু তাহের ১২ হাজার টাকা দিয়ে দুই বছর মেয়াদি আরএমপি কোর্স করেছেন। কোথায়, কোন প্রতিষ্ঠানে করেছেন, সে বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি। একই সঙ্গে মানুষ ও পশুর চিকিৎসা দেন তিনি। চরাঞ্চলে ‘তাহের ডাক্তার’ নামে পরিচিত তাহেরের ইনজেকশনে সন্তান জন্ম হয় বলে নামডাক আছে। আর মা-শিশুর মৃত্যু হলে ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ বলে চালিয়ে দেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
জাহাজের আলগা চরে ১৬ বছর ধরে দাই হিসেবে কাজ করেন শাহিদা বেগম। চরে তাঁর বেশ নামডাক। একই পরিবারের শাশুড়ি, পুত্রবধূ ও নাতনির সন্তান তাঁর হাতে হয়েছে বলে গর্ব বোধ করেন তিনি। কাজ শিখেছেন শাশুড়ির (দাই) কাছ থেকে। আশপাশের তিন থেকে চার চরের নারীদের প্রসববেদনা উঠলে তাঁর ডাক পড়ে। কোথাও ব্যর্থ হলে তিনি পল্লী চিকিৎসক তাহেরকে ডাকেন। জাহাজের আলগা চরে ৩০০ পরিবারের ২ হাজার মানুষের বসবাস। সেখানে তাহেরের মতো পল্লিচিকিৎসক আছেন ছয়জন—নুরুল, আনোয়ার হোসেন, আতাউর জামান, আরমান হোসেন, ফরহাদ ও লিটন তাহমিদ। তাঁদের অধিকাংশের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। কেউ বাবা, কেউ দাদা, কেউ আবার সরকারি চিকিৎসকদের সঙ্গে থেকেই ‘ডাক্তার’ হয়ে গেছেন। সর্দি-কাশি ছাড়াও তাঁরা প্রসূতিদের চিকিৎসা দেন।
পল্লী চিকিৎসক আবু তাহের বলেন, চরে একটি কমিউনিটি ক্লিনিক আছে। সেখানে প্রসূতিদের চিকিৎসা দেওয়ার কথা থাকলেও সারা দিন বন্ধ থাকে। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাসে এক দিন এসে টিকা দিয়ে চলে যান। তাই চরের মানুষ চিকিৎসা নিতে তাঁদের কাছে যান। অক্সিটোসিন ইনজেকশনের বিষয়ে বলেন, ‘আমাদের ওই ইনজেকশন দেওয়ার অধিকার নেই। কিন্তু এখন সবাই ব্যবহার করছে। পল্লিচিকিৎসকেরা চরাঞ্চলে সব ধরনের চিকিৎসা করেন।’
তবে মশাল চরের পল্লী চিকিৎসক সাইদুর রহমান বলেন, তিনি শুধু জ্বর, সর্দির ওষুধ বিক্রি করেন। যেসব স্বাভাবিক ইনজেকশন ও স্যালাইন আছে তা দেন। প্রসূতিদের চিকিৎসার বিষয়টি অস্বীকার করেন। তাঁর কাছে কেউ গেলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে যেতে পরামর্শ দেন বলে দাবি করেন।
সদরের ঘোগাদহ ইউনিয়নের এক পল্লী চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘বাজারে এই ইনজেকশন সহজে পাওয়া যায়। আপনি কিনতে চাইলে যেকোনো ফার্মেসি বিক্রি করবে, প্রেসক্রিপশনও চাইবে না। এখন আমার কাছেই ১৪টি ইনজেকশন আছে।’
পল্লী চিকিৎসকের কথার সূত্র ধরে জেলা শহরের পৌর বাজার এলাকার কয়েকটি ওষুধের দোকানে গিয়ে দেখা যায, ৫ এএম অক্সিটোসিন ইনজেকশন কোনো ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই খুচরা ১৫ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। জেলার ৯ উপজেলায় ২ হাজার ১০০টির বেশি ওষুধের দোকান আছে। যেখানে নিবন্ধিত সব কোম্পানির ওষুধ বিক্রি হয়। সেখানে প্রতি মাসে কী পরিমাণ অক্সিটোসিন ইনজেকশন বিক্রি হয়, জেলা ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কাছে তার কোনো তথ্য নেই।
জেলা ওষুধ তত্ত্বাবধায়ক রনী চন্দ্র গোপ বলেন, পল্লী চিকিৎসকদের কাছে ইনজেকশন বিক্রির বিধান নেই। পল্লিচিকিৎসকদের হাতে অক্সিটোসিন পৌঁছানোর বিষয়ে তাঁর কাছে কোনো তথ্য নেই। দ্রুতই তাঁর দপ্তর অভিযান চালাবে। গত এক মাসে কতগুলো অভিযান চালিয়েছেন, তা জানতে চাইলে কোনো তথ্য দিতে পারেননি। তিনি বলেন, তাঁর দপ্তরে লোক আছেন মাত্র দুজন। কোনো গাড়িও নেই। এ জন্য সব জায়গায় অভিযান চালানোও সম্ভব হয় না।
উলিপুরের জরিনা ও সাজেদার বাড়ি সবচেয়ে কাছের স্বাস্থ্যকেন্দ্র কচাবাচা জাহাজের আলগা কমিউনিটি ক্লিনিক। বর্ষাকালে ক্লিনিকে যেতে নৌকায় আধা ঘণ্টা ও শুষ্ক মৌসুমে প্রায় এক ঘণ্টা লাগে। গত ১৯ থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর চার দিন সরেজমিন ক্লিনিকটি তালাবদ্ধ পাওয়া যায়। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাকের বাড়ি উপজেলা শহরে। মাসের অধিকাংশ সময় তিনি শহরে থাকেন। চরের বাসিন্দা জামাল মিয়া (৬৫) জানান, ক্লিনিকটি মাসে দু-এক দিন খোলে।
জানতে চাইলে আবদুর রাজ্জাক বলেন, ক্লিনিকটি ব্রহ্মপুত্রের দুর্গম চরে। যাওয়া-আসা করতে নৌকা ভাড়াই লাগে ১ হাজার ২০০ থেকে ৫০০ টাকা, যা বেতন পান তা দিয়ে ১৫ বারও যাওয়া সম্ভব নয়। চরে থাকার ব্যবস্থাও নেই। গত তিন মাস তাঁর বেতন বন্ধ। তাই ক্লিনিকে কম যান। একবার গেলে এক সপ্তাহের চিকিৎসা দিয়ে আসেন।
আরও তিনটি কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে একই চিত্র পাওয়া যায়। ওই ক্লিনিকে গেলেও সাজেদা বা জরিনারা সুস্থভাবে প্রসব করাতে পারতেন, বিষয়টা তা–ও নয়। কারণ, প্রাথমিক চিকিৎসা (ঠান্ডা–জ্বর, কাশি) ছাড়া কোনো সুবিধাই নেই ক্লিনিকগুলোতে।
প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রসূতিদের আরও একটি বিকল্প ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণকেন্দ্র। সেখানে স্বাভাবিক ডেলিভারি সুবিধা আছে। কিন্তু চর থেকে যেতে কয়েক ঘণ্টা লেগে যায়। গেলেও চিকিৎসক পাওয়ার নিশ্চয়তা নেই। জেলায় ৭৩টি ইউনিয়নের মধ্যে মাত্র ৪০টিতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণকেন্দ্র আছে। যার ১৩টিতেই উপসহকারী কমিউনিটি চিকিৎসা কর্মকর্তা নেই। বেশ কিছু কেন্দ্রে সহকারীও নেই। এ জন্য বাধ্য হয়ে দাই ও পল্লী চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন প্রসূতিরা। তবে জেলার সবারই শেষ ভরসা সদর হাসপাতাল।
২০২২ সালের জনশুমারির তথ্য অনুযায়ী, কুড়িগ্রামের ২৩ লাখ মানুষের জন্য ২৯২টি কমিউনিটি ক্লিনিক আছে। নীতিমালা অনুযায়ী ৩৮৩টি থাকার কথা। জেলার ৪৫০টি দ্বীপচরের মধ্যে মাত্র ৫০টি কমিউনিটি ক্লিনিক আছে, সেগুলোও অনিয়মিত।
কুড়িগ্রাম আইন মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ এস এম আব্রাহাম লিংকন বলেন, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল আইনের ধারা ২৮(৩) অনুযায়ী, কেউ স্বঘোষিত চিকিৎসক বা ডেন্টাল চিকিৎসক বলে দাবি করলে বা পাস না করে নামের আগে চিকিৎসক পদবি লাগালেও শাস্তির বিধান আছে। এমনকি প্রতারিত না হলেও ভুয়া চিকিৎসকের জন্য তিন বছরের কারাদণ্ড বা এক লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান আছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার চাইলে প্রচলিত আইনে মামলার সুযোগ আছে।
ওষুধ তত্ত্বাবধায়ক রনী চন্দ্র গোপ জানান, ফার্মেসি চালাতে অবশ্যই একজন ফার্মাসিস্ট থাকতে হবে। তাঁকে অবশ্যই ওষুধের মান ও চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র দেখে ওষুধ বিক্রি করতে হবে। অন্যথায় ওষুধ ও কসমেটিকস আইন ২০২৩-এর ৪০ (ঘ) ধারা অনুযায়ী ওই ফার্মেসির মালিককে ২০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান আছে।
কুড়িগ্রামের সিভিল সার্জন মঞ্জুর এ মুর্শেদ বলেন, জেলায় কী পরিমাণ পল্লী চিকিৎসক আছেন, স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে তথ্য নেই। অতীতে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তত্ত্বাবধানে সিএসবিএ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকলেও তিন বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ আছে। বর্তমানে বেসরকারি উদ্যোগে তিন ও ছয় মাসের প্রশিক্ষণ দিয়ে সবাইকে ‘ডাক্তার’ বানিয়ে দিচ্ছে। তাঁরাও নিজেদের চিকিৎসক পরিচয় দিচ্ছেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই প্রসূতিদের চিকিৎসা দিচ্ছেন। এতে মা ও শিশুমৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না থাকায় তিনি কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেন না।
প্রত্যন্ত চরাঞ্চলে স্বাভাবিক ডেলিভারির বিষয়ে মঞ্জুর এ মুর্শেদ বলেন, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গর্ভবতী মায়েদের স্বাভাবিক ডেলিভারির জন্য প্রশিক্ষিত দাই আছেন। কিন্তু চরের বাসিন্দারা বাড়িতে স্থানীয় দাই বা পল্লী চিকিৎসকদের ডেকে আনেন। পল্লী চিকিৎসকের অক্সিটোসিন ইনজেকশন ব্যবহারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া পল্লী চিকিৎসক কোনো ধরনের ইনজেকশন দিতে পারবেন না। এর বাইরে কিছু হলে তিনি ব্যবস্থা নেবেন। ডেলিভারি করাতে প্রশিক্ষিত দাই বা প্রসূতি চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। তিনি প্রসূতিদের পল্লী চিকিৎসকদের কাছে না গিয়ে ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যাওয়ার অনুরোধ করেন।
দ্বিতীয় সন্তান জন্ম দেওয়ার কথা বলতে গিয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকেন কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের নাসরিন বেগম। বলেন, ‘এমন খারাপ সময় যেন কারও জীবনে না আসে। আমাগো দ্যাশে ভালো ডাক্তার নাই। এখানে আল্লাহর ওপর ভরসা করেই জীবন সঁপে দিতে হয় পল্লী চিকিৎসকের হাতে।’
Leave a Reply