আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-
শনিবার, ১০ আগষ্ট ২০২৪ ইং ০৭:০০ পিএম.
কুড়িগ্রামে চরাঞ্চলে আবাসনের নামে সরকারি অর্থ অপচয় হচ্ছে। লাখ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত এসব আবাসনের মালামাল চুরির পাশাপাশি মাদকসেবীদের অভায়শ্রমে পরিণত হচ্ছে। নামমাত্র কাজ দেখিয়ে সরকারি অর্থ আত্নসাৎ করারও অভিযোগ রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার গঙ্গাধর নদী দ্বারা বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ইউনিয়ন নারায়ণপুর। এই ইউনিয়নের ঢাকডহর গ্রামে ১২বিঘা জমিতে গৃহ ও ভূমিহীনদের জন্য গড়ে তোলা হয় একটি আবাসন প্রকল্প। অর্ধ কোটি টাকারও বেশি ব্যয়ে নিমার্ণ করা হয় ৬৫টি ঘর। কিন্তু প্রায় ৭ বছর আগে এই আবাসনটি নির্মাণ হলেও এখনো সেটি হস্তান্তর বা উদ্বোধন করা হয়নি। ইতোমধ্যে আবাসনের ৮টি ঘর ছাড়া বাকি ঘরের মালামাল চুরি হয়ে গেছে। এই বিষয়ে জুলাই মাসে ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারি কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে চারজন ব্যক্তিকে আসামী একটি মামলা করেন কচাকাটা থানায়। শুধু নারায়ণপুর ইউনিয়নে নয় এমন চিত্র পাশের বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের লুছনি গ্রামের আধা পাকা আবাসনেরও। এখানে ৫৬টি ঘরের চাল, দরজা এবং জানালাসহ অন্যান্য মালামাল চুরি হয়ে গেছে। পার্শ্ববর্তি পাখিউড়া, আইড়মারী, নুনখাওয়া, কাঠগিরি, মাইঝালিসহ কয়েকটি গ্রামে নির্মাণকৃত আবাসন প্রকল্প গুলোর একই চিত্র।
মামলার আসামী মোল্লা মিয়া বলেন, আমাদের নিজের ১৮বিঘা জমির মধ্যে ১২বিঘা জমি সরকারকে আবাসন করার জন্য দেয়া হয়। পরে প্রশাসনের লোকজন বাকি ৬বিঘা জমিতে পুকুর করে সেখান থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু তুলে আবাসনের মাটি ভরাট করা হয়। বন্যা আর ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে পুকুরের তীর ভেঙ্গে গেলে পুনরায় ড্রেজার দিয়ে বালু তুলে তীর বাঁধা হয়। এসময় আবাসনের ৩টি ঘর ভেঙ্গে বিলিন হয়ে যায়। দীর্ঘদিন ধরে আবাসনটি পরিত্যক্ত থাকায় রাতের আধারে কে বা কারা এসে ঘরের বেড়া খুলে নিয়ে গেছে। কিন্তু আবাসনের জিনিস পত্র চুরির অভিযোগে আমাদের পরিবারের ৪জনকে আসামি করে মামলা করে তহশিলদার।
তিনি আরও বলেন, আমাদের এলাকার এক গ্রাম পুলিশের সাথে জমিজমা বিরোধের কারণে সে এবং তহশীলদার ষড়যন্ত্র করে আমাদের নামে মিথ্যা মামলা করেছে।
আবাসনে আশ্রিত মজিবর রহমান বলেন, বাপু হামার নামে কোন ঘর বরাদ্দ হয়নি। কিন্তু মেম্বারের অনুমতি নিয়ে আছি। আবাসনের জন্য বরাদ্দকৃত লেট্রিন, টিউবওয়েল দেয়া হয়নি। এছাড়াও ইট দিয়ে ঘরের মেঝে পাকা করার নিয়ম থাকলেও কাজ সমাপ্ত না করেই সে সব অর্থ আত্নসাৎ করা হয়েছে বলে দাবী তার। এই আবাসনের ঘর সুবিধাভোগীদের মধ্যে হস্তান্তর বা উদ্বোধন করা হয়নি। প্রায় ৭ বছর থেকে পরে আছে। রাত করে বিকট শব্দ হয়। পরে সকাল বেলা উঠে দেখি আবাসনের ঘরের বেড়া নেই। এমন করে প্রায় রাতে টিন খোলার শব্দ পাওয়া যায়। কিন্তু লোকজন কেউ না থাকায় ভয়ে বের হতে পারি না। যদি কেউ মেরে ফেলে।
চরাঞ্চলের বাসিন্দা মকবুল হোসেন বলেন, ইতোমধ্যে উপজেলার বেশ কিছু আবাসেনর অস্তিত্ব নেই। তার দাবী আবাসনের নামে সরকারের অর্থ অপচয় করা হচ্ছে। এখন এসব আবাসনে মাদক সেবীদের অভায়শ্রম হওয়ায় নানা অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। ফলে এসব আবাসন এখন স্থানীয়দের কাছে বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে কচাকাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিশ্বদেব রায় জানান, আসামীদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এই বিষয়ে ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারি কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম মামলা করার কথা স্বীকার করলেও ষড়যন্ত্রে করে মামলার প্রশ্নে কোন মন্তব্য করেননি।
নাগেশ্বরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিব্বির আহমেদ জানান, সরকারি আবাসনের মালামাল চুরি হওয়ায় একটি মামলা হয়েছে। মামলা হওয়ায় আদালতের মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তি হবে। তবে অন্যান্য আবাসনের অস্তিত্ব নেই প্রশ্নে বলেন,এগুলো খোঁজখবর নিয়ে বিস্তারিত জানাতে পারবো।
Leave a Reply