আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-
বৃহস্পতিবার, ২৭ জুন ২০২৪ ইং ০৩:০১ পিএম.
‘বারে বারে ভাঙে। এই নিয়া পাঁচভাঙা দিলোং। স্বামীটা পঙ্গু; অচল হয়া পড়ি আছে। বেটিকোনা (মেয়েটা) স্কুলত পড়ে। জুয়ান বেটি নিয়া কট্টি (কোথায়) যামো বুঝবের পাবাইছং (পারছি) না।’ গতকাল রোববার কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন রাজারহাট উপজেলার কালিরহাট গ্রামে তিস্তা নদীর ভাঙনের শিকার নমিতা রাণী।
তিস্তার ভাঙনে তাঁর মতোই বাড়িঘর হারিয়ে নিঃস্ব কালিরহাট গ্রামের আরেক নারী ভারতী রাণী। ছেলে-স্বামীকে রেখেছেন অন্যের বাড়িতে। শুধু বসতভিটার একটি ঘর তিস্তার পাড়ে দাঁড়িয়ে আছে এখনও। সেটি কখন ভেঙে যায়– সেই আতঙ্কে দিন পার করছেন। উৎকণ্ঠিত ভারতী বলেন, ‘হামরা চাউল-ডাউল চাই না। ১০ কেজি চাউল নিয়া কী করমো? না খায়া থাকি, তাও নিজের বাড়িত থাকব। তিস্তার ভাঙনে হামার সাত শতক ভিটেমাটি, ঘর, মুরগি– সব ভেসে গেছে। হামার এই ঘরটা রক্ষা করি দেও।’
ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তার আগ্রাসী ভাঙন থেকে রক্ষা পেতে এভাবেই এখন জনে জনে আকুতি করছে কুড়িগ্রামের রাজারহাট, উলিপুর, রৌমারী ও সদর উপজেলার শত শত পরিবার। এরই মধ্যে ভাঙনে যাদের সব কিছু হারিয়ে গেছে, তাদের কান্না যেন বাঁধ মানছে না। ভাঙনের ঝুঁকিতে থাকা অনেকে আবার বাড়িঘর ভেঙে অন্য জায়গায় স্থানান্তর করছে। কেউ কেউ বাড়ির গাছপালা কেটে কম দামে বিক্রি করে দিচ্ছে।
তিস্তার ভাঙনের শিকার হয়েছে রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ও ছিনাই ইউনিয়নের কিং ছিনাই, জয়কুমার, নামা জয়কুমার গ্রামের ৭০টি পরিবার। ঝুঁকিতে রয়েছে জয়কুমার আশ্রয়ণ প্রকল্প। কালিরহাট ঘাট এলাকার চতুরা গ্রামে ৮০টি পরিবার সব হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে। ঝুঁকিতে আছে কালিরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বাজার।
অন্যদিকে ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে রৌমারীর ৩৫টি গ্রামের তিন শতাধিক পরিবার বসতভিটা হারিয়েছে। উলিপুর উপজেলায় ভাঙনের ঝুঁকিতে আছে বাজার, কমিউনিটি ক্লিনিক, বিদ্যালয় ও আশ্রয়কেন্দ্র। চিলমারী উপজেলায় ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে ব্রহ্মপুত্রের ডান তীর রক্ষা বাঁধ। ভূরুঙ্গামারীতে ভাঙনে তলিয়ে গেছে দুধকুমার নদের তীর সংরক্ষণ বাঁধ। সদর উপজেলায় ধরলার ভাঙনে বিভিন্ন গ্রামের ১৪০টি পরিবার ভিটেমাটি হারিয়েছে।
কুড়িগ্রাম পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান জানান, ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তায় ভাঙন রোধে পাউবো কাজ করছে। জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন প্রতিরোধের চেষ্টা করা হচ্ছে। তিস্তায় আমাদের নিজস্ব একটা স্টাডি চলমান। সেটা হলে প্রকল্প পেশ করব। সে বরাদ্দ না আসা পর্যন্ত তিস্তায় স্থায়ী কাজ হচ্ছে না।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, নদ-নদীর নাব্য ফেরাতে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। ভাঙন প্রতিরোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণে গ্রহণ করা হবে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ।
Leave a Reply