আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-
কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দুর্গাপুর উচ্চ বিদ্যালয়। শিক্ষার্থীদের পাঠদানে বিঘ্ন সৃষ্টি করে বিদ্যালয় মাঠে নিয়মিত গরু-ছাগলের হাট বসানো হচ্ছে। বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হাটের ইজারাদার। বিষয়টি জেনেও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি)।
স্থানীয়দের অভিযোগ, স্থানীয় প্রশাসনের সম্মতি নিয়ে প্রধান শিক্ষক, ব্যবস্থা কমিটির সভাপতি ও ইজাদারের যোগসাজশে বিদ্যালয় মাঠে নিয়মিত পশুর হাট বসানো হচ্ছে। এ নিয়ে একাধিকবার স্থানীয় প্রশাসন বরাবর অভিযোগ করেও কোনও ফল মেলেনি।
এর আগে ২০২০ সালে বিদ্যালয় মাঠে হাট বসানো ও কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে প্রধান শিক্ষক উৎপল কান্তি সরকারের বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং দুর্নীতি দমন কমিশন আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে মাউশির মহাপরিচালক বরাবর প্রতিবেদন পাঠান তৎকালীন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম। ২০২০ সালে পাঠানো ওই প্রতিবেদন গত চার বছরেও আলোর মুখ দেখেনি। রহস্যজনক কারণে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেয়নি মাউশি কিংবা মন্ত্রণালয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি শুক্র ও মঙ্গলবার দুর্গাপুর হাট বসে। এর মধ্যে মঙ্গলবার দুপুর ১টা থেকে বিক্রির জন্য বিদ্যালয় মাঠে গরু-ছাগল জড়ো করা হয়। ক্লাস চলা অবস্থায় বিকাল ৫টা পর্যন্ত চলে কেনাবেচা। হাটে আসা লোকজনের কোলাহল, গরু-ছাগলের চিৎকার আর মলমূত্রের গন্ধের মধ্যেই প্রায় তিন ঘণ্টা ক্লাসে অবস্থান করে শিক্ষার্থীরা। এমন সমস্যার মধ্যে পাঠে মনোযোগ বিঘ্নিত হলেও প্রধান শিক্ষকের ভয়ে কোনও শিক্ষক ও শিক্ষার্থী কিছু বলার সাহস পায় না।
সর্বশেষ মঙ্গলবার (০৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে হাট চলাকালে বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, মাঠজুড়ে গরু-ছাগলের বেচাকেনা চলছে। মাঠের উত্তর পাশে প্রধান শিক্ষকের কার্যালয়ের সামনে কাঠের আসবাবপত্রের পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। কোলাহলে পাঠদানে বিঘ্ন ঘটায় বিদ্যালয় ভবনের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে শিক্ষার্থীরা। এ সময় কথা হয় নবম শ্রেণির বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে।
ক্লাস চলাকালে মাঠে গরু-ছাগলের হাট বসায় সমস্যা হচ্ছে জানালেও প্রকাশ্যে কোনও কথা বলতে রাজি হয়নি শিক্ষার্থীরা। নাম প্রকাশ না করার আশ্বাস দিলে কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, আমাদের সমস্যা হয়। মাঠে কোলাহল। ক্লাসে মনোযোগ দিতে পারি না। গরু-ছাগলের মলমূত্রের গন্ধে দম বন্ধ হয়ে আসে। কিন্তু কিছু বলার সাহস পাচ্ছি না। অনেকদিন ধরে মাঠে এভাবে হাট বসে আসছে। হাটের দিন আমরা খেলাধুলার সুযোগও পাই না। এটা বন্ধ করা দরকার। কিন্তু প্রধান শিক্ষকের ভয়ে কেউ কিছু বলে না। হাট নিয়ে আমরা কিছু বললে প্রধান শিক্ষক বলেন, মাঠ পরিষ্কার করানো হবে। কিন্তু গোবর পরিষ্কার করলেও গরু-ছাগলের মূত্রের গন্ধ স্কুলজুড়ে থেকে যায়। মনে হচ্ছে এর কোনও সমাধান করার কেউ নেই।
বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইজারাদার নিজেই বিদ্যালয় কমিটির সভাপতি। প্রধান শিক্ষক মাঠে হাট বসানোর সম্মতি দিয়েছেন। অভিভাবক ও স্থানীয়রা আপত্তি জানালেও কারও কথা শোনেননি। প্রধান শিক্ষক বেপরোয়া। ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোনও ফল পাওয়া যায়নি।
মাঠে পশুর হাট বসানো নিয়ে আপত্তি জানিয়ে সম্প্রতি উলিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক ওমর ফারুক। তিনি বলেন, ‘আমি গত ০১ ফেব্রুয়ারি ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। মাঠ থেকে পশুর হাট অন্যত্র স্থানান্তরের অনুরোধ জানিয়েছি। কিন্তু এরপরও মাঠে পশুর হাট বসানো অব্যাহত আছে।’
এ ব্যাপারে জানতে প্রধান শিক্ষক উৎপল কান্তি সরকারের মোবাইলে কল দিয়ে নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে। বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও হাট ইজারাদার খাইরুল ইসলাম বাবলু বলেন, ‘কয়েক যুগ ধরে এই মাঠে হাট বসছে। হাট ইজারা দেয় উপজেলা প্রশাসন। আমি সভাপতি হওয়ার পর মাঠ থেকে হাট স্থানান্তরের জন্য উপজেলা প্রশাসনকে অনুরোধ করেছি। তারা জায়গা দিলে মাঠ থেকে হাটের কার্যক্রম সরিয়ে নেবো।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উলিপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘দুর্গাপুর বিদ্যালয় মাঠ থেকে পশুর হাট অপসারণে আমরা কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছি। আগামীতে যাতে হাট না বসে তা নিশ্চিত করে নতুন বাংলা বর্ষে ইজারা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।’
Leave a Reply