আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-
বৃহস্পতিবার, ০১ মে ২০২৫ ইং ০৭:০০ পিএম.
কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলায় জামায়াতের অঙ্গ সংগঠন শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের এক নেতার ‘কলিজা টেনে ছিঁড়ে ফেলা’ ও তার দল জামায়াতকে ‘নিশ্চিহ্ন’ করার হুমকি দেওয়ার অভিযোগে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোঃ আনিছুর রহমানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে জেলা বিএনপি।
বৃহস্পতিবার (০১ মে) কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্যসচিব সোহেল হোসনাইন কায়কোবাদ স্বাক্ষরিত নোটিশ ওই বিএনপি নেতার কাছে পাঠানো হয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে। সোহেল হোসনাইন কায়কোবাদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
অভিযুক্ত বিএনপি নেতা মোঃ আনিছুর রহমানকে দেওয়া নোটিশে বলা হয়েছে, ‘সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপনার একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে আপনি প্রকাশ্যে হুমকি প্রদান, অসংলগ্ন, উত্তেজনাপূর্ণ ভাষায় বক্তব্য দিয়েছেন এবং একটি রাজনৈতিক দল সম্পর্কে অশালীন ও অবমাননাকর মন্তব্য করেছেন। ভিডিওতে ব্যবহৃত ভাষা এবং বক্তব্য সামগ্রিকভাবে দলীয় শৃঙ্খলা ও রাজনৈতিক সহনশীলতার পরিপন্থি। এ কারণে আপনার বিরুদ্ধে কেন সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা পত্রপ্রাপ্তির ২৪ ঘণ্টা মধ্যে জবাব দেওয়ার জন্য বলা হলো।’
নোটিশ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিএনপি নেতা মোঃ আনিছুর রহমান। তিনি বলেন, ‘দল আমার কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে, আমি ব্যাখ্যা দেবো।’
এই বিএনপি নেতা দাবি করেন, ‘জামায়াতের ওই ছেলে (রুবেল মিয়া) আমার দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও দলের নেতা তারেক রহমানকে নিয়ে কটূক্তি করেছিল। এ ঘটনায় দলের ছেলেরা ওর ওপর উত্তেজিত হয়ে পড়েছিল। পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে গিয়ে আমি ওভাবে ধমক দিয়েছিলাম। আমি বুঝতে পারছি যা বলেছি ঠিক হয়নি। কিন্তু পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে গিয়ে এমনটা হয়েছে। তবে ওই ছেলে পুরো ঘটনার খণ্ডিত অংশের ভিডিও ছেড়েছে। আমি দলের কাছে জবাব দেবো।’
কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্যসচিব সোহেল হোসনাইন কায়কোবাদ বলেন, ‘অভিযুক্ত মোঃ আনিছুর রহমানের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। তিনি ব্যাখ্যা দিলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এর আগে গত মঙ্গলবার বিকালে রাজারহাট থানা মোড়ে শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের বায়তুলমাল সম্পাদক মোঃ রুবেল মিয়াকে আটকের হুমকি দেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোঃ আনিছুর রহমান। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। তাতে জামায়াত নেতা রুবেলকে উদ্দেশ করে ওই বিএনপি নেতাকে বলতে শোনা যায়, ‘কলিজা টানি ছিঁড়ি ফেলবো। একবারে টানি ছিঁড়ি ফেলবো তোমার, চেনো তুমি, এই চেনো। খুব পাওয়ার দেখাও জামায়াতের, একবারে নিশ্চিহ্ন করি দেবো জামায়াত। চেনো বিএনপি।’ পরে বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হলে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা।
মোঃ রুবেল মিয়ার অভিযোগ, গত ২১ এপ্রিল উপজেলা ভূমি অফিসে আমাদের দুজন কর্মীকে মারধর করেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। আমি এর প্রতিবাদে এক স্বৈরাচারের বিদায় হয়েছে, নব্য স্বৈরাচারের সূচনা হওয়ার উপক্রম এমন একটি লেখা ফেসবুকে পোস্ট দিই। এ ছাড়া মঙ্গলবার স্থানীয় চান্দামারি উচ্চ বিদ্যালয়ের কমিটি গঠন নিয়ে অভিভাবক সমাবেশ হয়। ওই সমাবেশ থেকে স্থানীয় ব্যক্তি অ্যাডভোকেট আহমদ আলী (উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি) ভাইকে সভাপতি করার সুপারিশ করা হয়। কিন্তু বিএনপির লোকজন উপজেলা থেকে শোডাউন করে স্কুলে এসে ওই নাম কেটে দেন। তারা তাদের প্রার্থীদের নাম দিয়ে চলে যান। আমি এর প্রতিবাদ করি। এই দুই ঘটনায় তারা আমাকে বিকালে তুলে নিয়ে থানা মোড়ের একটি দোকানে নিয়ে এমন বাজে আচরণ করেন। চড়-থাপ্পড় দিয়ে প্রাণনাশের হুমকি দেন। সেইসঙ্গে জামায়াতকে নিশ্চিহ্ন করার হুমকি দেন তারা।’
Leave a Reply