আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-
বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫ ইং ০৭:০১ পিএম.
বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরই স্বপ্ন থাকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করার। তবে এক্ষেত্রে প্রতিযোগিতার সমুদ্র পেড়িয়ে সুযোগ পেতে হয়। তেমনই এক শিক্ষার্থী ময়নুল হক। বহু কাঠখড় পুড়িয়ে সুযোগ পেয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। তবে এমন খবর পাওয়ার দিন রাতেই মারা যান তার অসুস্থ পিতা।
অর্থের অভাবে রোজা রেখে ভর্তির জন্য পড়ালেখা করেছেন দেশের বৃহত্তম সাবেক ছিটমহলের এই শিক্ষার্থী। সুযোগ পান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। তবে তার এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে আর্থিক সংকট। সন্তানের ভর্তির সুযোগ পাওয়ায় খুশির পরিবর্তে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছে সদ্য স্বামীহারা গৃহিণী মায়া বেগম।
ময়নুল হকের বাড়ী কুড়িগ্রামের সীমান্ত ঘেঁষা ফুলবাড়ী উপজেলার সদর ইউনিয়নের বিলুপ্ত হওয়া দেশের বৃহৎ ছিটমহলের দাসিয়ারছড়ার দোলাটারী গ্রামে। তিনি ২০২২ সালে গংগারহাট এমএএস উচ্চ বিদ্যালয়ে এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ এবং ২০২৪ সালে ফুলবাড়ী ডিগ্রি কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন।
সরেজমিনে শিক্ষার্থী ময়নুল হকের বাড়ীতে গিয়ে দেখা গেছে, মাত্র তিন শতক জমিতে জরাজীর্ণ টিনসেড ঘর। সেই ঘরে এক পাশে থাকেন মা মায়া বেগম ও ছোট বোন লুৎফা খাতুন এবং অন্যপাশে থাকেন ময়নুল হক ও তার ছোট ভাই মেরাজ। ময়নুল হকের বাবা লুৎফর রহমান ছিলেন ইটভাটার শ্রমিক। ইটভাটায় কাজ করে স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ের ভরনপোষণ চালিয়েছেন তিনি। শত কষ্টের মাঝেও তিন সন্তানের পড়াশোনার কোনও কমতি হতে দেননি।
ময়নুল এসএসসি ও এইচএসসিতে পড়াকালীন অবস্থাতেই ছাত্র পড়াতেন। নিজের পড়াশোনা ও অন্যান্য খরচ মিটিয়ে সংসারে কিছুটা সহযোগিতা করতে দিনমজুরীর কাজও করতো সে। তবে এখন ভর্তির সুযোগ পেয়েও বাবাকে হারিয়ে ভর্তি ও পড়াশোনা চালানো নিয়ে দুচিন্তায় দিন পার করছে শিক্ষার্থী ময়নুল হক ও তার মা মায়া বেগম।
দরিদ্র্য পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি লুৎফর রহমান মারা যাওয়ার পর পুরো পরিবারের মাঝে অন্ধকার নেমে এসেছে। ময়নুলের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, পড়াশোনা চলাকালীন খরচ ও ছোট ছেলে মেরাজ এবং ছোট মেয়ে লুৎফা খাতুনের পড়াশোনা ও ভরনপোষণ চালিয়ে যাওয়া নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন মায়া বেগম।
মায়া বেগম জানান, তার স্বামীর আয় সীমিত হলেও দুই ছেলে ও এক মেয়ের ভরনপোষণ এবং পড়াশোনার খরচ চালিয়েছেন। বড় ছেলের মাধ্যমিক পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে তিনি ব্রেইন টিউমারে আক্রান্ত হয়। দুটি গরু ও আধবিঘা জমি বন্দক নেয়া ছিল। স্বামীর চিকিৎসার জন্য সেগুলোও শেষ। টাকার অভাবে উন্নত চিকিৎসা করাতে পারেনি। স্বামীকে বাঁচাতেও পারিনি।
তিনি আরও বলেন, বড় ছেলে ময়নুলের স্বপ্নপূরণে আর্থিক সহযোগিতা প্রয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি ও পড়াশোনার খরচ মেটানো এখন আমার পক্ষে কঠিন হয়ে পড়েছে।
ময়নুলের ভর্তির শেষ সময় মে মাসের ৫ তারিখ জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ঘরে কোনো টাকা নেই। ছেলের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি ও পড়াশোনার খরচ চালানোর জন্য সরকারসহ বিত্তবানদের সহযোগিতা কামনা করছি।
শিক্ষার্থী ময়নুল বলেন, বাবা অনেক কষ্ট করে আমাদের পড়াশুনার খরচ চালিয়েছেন। আমিও পড়াশোনার পাশাপাশি কখনও ছাত্র পড়ানো ও মানুষের জমিতে দিনমজুরীর কাজ করেছি।
রোজা রেখে পড়ালেখার বিষয়টি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ঢাকায় টানা এক মাস অভাবের কারণে রোজা রেখেছি। পরে বড় ভাইয়েরা বিষয়টি জানতে পারে। তখন তারা আমার খাওয়ার ব্যবস্থা করে। সেখানে থেকেই আমি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা দেই। জগন্নাথের এ ইউনিটের তিন নং শিফটে ৩৫৮তম হই। পরে ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগে পড়ার সুযোগ পাই।
ভর্তির সবশেষ তারিখ আগামী ৫ মে জানিয়ে এই শিক্ষার্থী ভর্তিসহ পড়াশোনার খরচ বহন করার জন্য সরকারসহ বিত্তবানদের কাছে সহযোগিতা চান। শিক্ষার্থী ময়নুলের মোবাইল নং:- ০১৩১৮-৯৬৯০৯৭।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার রেহেনুমা তারান্নুম জানান, ওই শিক্ষার্থীর ঠিকানা তার জানা নেই। এ বিষয়ে তিনি খোঁজ খবর নেবেন। পাশাপাশি ময়নুলকে সহযোগিতা করবেন বলে প্রাথমিক আশ্বাসও দেন তিনি।
Leave a Reply