আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-
বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪ ইং ১২:০১ পিএম.
বুধবার (১৩ নভেম্বর) উত্তরবঙ্গের আলোচিত সর্ববৃহৎ বেদনা বিধুর “হাতিয়া গণহত্যা” দিবস।
কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলা সদর হতে ৮ কিলোমিটার পূর্ব দিকে হাতিয়া ইউনিয়ন। ওই ইউনিয়নের একটি জায়গার নাম দাগারকুঠি।
১৯৭১ সালের ২৩ রমজান দিনটি ছিল শনিবার। ওইদিন ফজরের নামাজের পরপর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী, তাদের এদেশীয় দোসর, দালাল ও রাজাকারদের সহায়তায় কুড়িগ্রাম, উলিপুর ও চিলমারী এই তিন দিক থেকে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা নদীর পাড়ের হাতিয়া ও বুড়াবুড়ি ইউনিয়নে আক্রমণ চালিয়েছিল। দাগারকুটি, নয়াদাড়া, নীলকণ্ঠ, হিজলী গোপপাড়া, অনন্তপুর, হাতিয়া ভবেশ, সরকারি গ্রাম, রামখানা, কলাতিপাড়া, হাতিয়া বকসী, রামরামপুর, সাতভিটা, বকসিগঞ্জ, জলাঙ্গারকুটি, শ্যামপুর, ব্যাপারী গ্রাম, মণ্ডলের হাট, সাদিরগ্রাম, আঠারোপাইকা ও মাদারটারী এই ২০টি গ্রাম থেকে ৬৯৭ জন নিরীহ-নিরপরাধ মানুষকে ধরে এনে জড়ো করেছিল দাগারকুটি বধ্যভূমিতে।
তারপর গুলি করে এবং বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল তাদের। শুধু তাই নয়, সেদিন নারীদের ধর্ষণ এবং বাড়িতে বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছিল নির্বিচারে। তাদের হত্যাযজ্ঞে কোলের শিশুরাও রেহাই পায়নি। ওই সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর লালসার শিকার গাবুরজান গ্রামের বীরাঙ্গনা হাছিনা বেগম এবং গুলির আঘাতে ক্ষতচিহ্ন নিয়ে প্রাণে বেঁচে থাকা রামরামপুর গ্রামের কামাল হোসেন, ভাটিগ্রামের আইয়ুব আলী, সেই ভয়াল দিনের কথা স্মরণ করে আজও ফুঁপিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে ফেলেন। দাগারকুটি বধ্যভূমিতে শহীদদের মরদেহ দুইদিন পড়েছিল। এরপর গ্রামবাসীরা এসে সেখানে তাদের গণকবর দিয়েছিলেন। সেই গণকবর ও স্মৃতিস্তম্ভ এখন দুটোই ব্রক্ষপুত্র নদে বিলীন হয়ে গেছে। শহীদদের স্মরণে হাতিয়া ইউনিয়নের অনন্তপুর বাজারের প্রবেশ মুখে একটি স্মৃতিফলক নির্মাণ করা হয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদ হাতিয়া ইউনিয়ন শাখার কমান্ডার মো. মজাহার আলী বলেন, ১৯৭১ সালের ওই মুক্তিযুদ্ধে দাগারকুঠি এলাকার শহিদদের পূর্নাঙ্গ তালিকা এখনও তৈরি হয়নি। হাতিয়া গণহত্যায় শহিদদের একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ এবং শহিদদের নামফলক স্থাপন ও তাদের পুনর্বাসনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান এলাকাবাসী।
এদিকে দিবসটি পালনে বুধবার সকালে স্মৃতিসৌধ চত্বরে হাতিয়া ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড ও বিএনপি’র উদ্যোগে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, স্মৃতিফলকে পুষ্পস্তবক অর্পণ, শহীদদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন, আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
Leave a Reply