আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-
শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪ ইং ০৬:০১ পিএম.
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র–জনতার আন্দোলনের সময় কুড়িগ্রামে আশিকুর রহমান (আশিক) নামের এক শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনায় করা হত্যা মামলার আসামির তালিকা থেকে তিন সাংবাদিকের নাম প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ হয়েছে। মামলায় তিন সাংবাদিককে আসামি করাকে ষড়যন্ত্র হিসেবে উল্লেখ করেন বক্তারা।
শনিবার দুপুর ১২টায় কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের আয়োজনে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে এই মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। একই কর্মসূচীতে জেলার একজন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকের ওপর হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়েছে।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আগের দিন ৪ আগস্ট কুড়িগ্রাম শহরে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের হামলায় আহত হয়েছিলেন আশিকুর। তিনি উলিপুরের পাঁচপীর ডিগ্রি কলেজের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। আশিকুর উলিপুর উপজেলার বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের সাতভিটা গ্রামের কৃষক চাঁদ মিয়ার ছেলে।
আশিকুরের পরিবারের লোকজন জানান, কুড়িগ্রাম শহরের শাপলা চত্বরে আওয়ামী লীগ-যুবলীগ-ছাত্রলীগের সঙ্গে ছাত্র-জনতার সংঘর্ষে মাথায় ঢিল লেগে আহত হন আশিকুর। তাঁকে প্রথমে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। ১৮ আগস্ট ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) নেওয়া হয় তাঁকে। আহত হওয়ার ২৮ দিন পর ১ সেপ্টেম্বর সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় করা হত্যা মামলায় নির্দেশদাতা হিসেবে তিন সাংবাদিককে আসামি করা হয়। এ মামলায় মোট ১০৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলাটি করেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী ও কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের রহুল আমিন নামের এক শিক্ষার্থী।
আশিক হত্যা মামলায় যে তিন সাংবাদিককে আসামি করা হয়েছে, তাঁরা হলেন কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক, কালের কণ্ঠ ও ইনডিপেনডেন্ট টিভির জেলা প্রতিনিধি আবদুল খালেক (ফারুক), নিউজ২৪ টিভি ও দৈনিক সংবাদের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি হুমায়ুন কবির (সূর্য) এবং এটিএন বাংলা ও এটিএন নিউজের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি ইউসুফ আলমগীর।
আসামিদের বিরুদ্ধে মামলার প্রতিবাদে আয়োজিত মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে স্থানীয় সাংবাদকর্মীরাসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের স্থানীয় সমন্বয়কেরাও উপস্থিত ছিলেন। বক্তব্য দেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক সফি খান, সনাক সভাপতি আহসান হাবীব (নীলু), প্রচ্ছদ সভাপতি শ্যামল ভৌমিক, সাংস্কৃতিক সংগঠক দুলাল বোস, প্রেসক্লাব সভাপতি রাজু মোস্তাফিজ, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজ খন্দকার, পরিবেশকর্মী ও সাংবাদিক সুজন মোহন্ত, ছাত্র সমন্বয়ক শাহী, সাদিক, রাজ্য জ্যোতি, ইয়ুথনেট প্রতিনিধি খাদিজা আক্তার প্রমুখ।
এ সময় বক্তারা বলেন, গত ৪ আগস্ট তৎকালীন সরকার দলীয় নেতা–কর্মীদের কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাব অবরুদ্ধ করা হয় ও পৌর বাজারে হামলার শিকার হন সাংবাদিকেরা। আন্দোলনের শুরু থেকেই সাংবাদিকেরা শিক্ষার্থীদের পক্ষ নিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে তাঁদের সহযোগিতা করেন। এমনকি কয়েকজন সাংবাদিকের সন্তান ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, কিন্তু আন্দোলন–পরবর্তী কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের তিন সাংবাদিকের নামে পুলিশ কোনো তদন্ত না করেই ষড়যন্ত্রমূলক মামলা গ্রহণ করে। এ ছাড়া ৪ আগস্টের ঘটনায় প্রেসক্লাবের সদস্য ইউনুছ আলীসহ ক্যামেরা পারসনরা ছাত্রলীগের হামলার শিকার হন। এ ঘটনায় পুলিশ মামলা নিলেও অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করা হয়নি। তাই দ্রুত কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের তিন সাংবাদিকের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও অপর সাংবাদিকের ওপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের জোর দাবি জানান বক্তারা। অন্যথায় বৃহত্তর আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দেন তাঁরা।
Leave a Reply