আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-
শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০২৪ ইং ০৫:৫৯ পিএম.
কুড়িগ্রামের চিলমারী নৌবন্দর এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে এক কলেজছাত্রের ভাসমান লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শুক্রবার (২৬ জুলাই) বন্দরের পন্টুন থেকে খানিকটা ভাটি থেকে লাশ উদ্ধার করা হয়। তবে নিহতের পরিবারের দাবি, তাকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করে নদে ফেলে দেওয়া হয়েছে। তার বাবা বাদী হয়ে চিলমারী মডেল থানায় মামলা করেছেন। থানার ওসি প্রাণকৃষ্ণ দেবনাথ এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নিহত কলেজছাত্রের নাম জোবায়ের হোসেন আমিন (১৯)। তিনি চিলমারী উপজেলার থানাহাট ইউনিয়নের মন্ডল পাড়া গ্রামের আব্দুল জলিলের ছেলে। কারমাইকেল কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।
তার মৃত্যুর ঘটনায় তার বাবা বাদী হয়ে উপজেলা শহরের দুই শিক্ষার্থীর নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৫/৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। আসামিরা হলেন- উপজেলার ছোট কস্তুরি পাড়ার ফজলুল হকের ছেলে সিনান স্বচ্ছ (২১) ও সামস পাড়ার আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে ইউসুফ আহমেদ জায়েদ (১৯)। এর মধ্যে স্বচ্ছ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং জায়েদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী বলে জানা গেছে।
মামলা ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) রাত ১০টার দিকে স্বচ্ছ ও জায়েদ জোবায়েরকে বাড়ি থেকে ডেকে মোটরসাইকেলে করে নিয়ে যান। পরে রাত ১টার দিকে জোবায়েরের মা তাকে ফোন দিলে দ্রুত বাড়ি ফেরার কথা জানান। কিন্তু রাত ৩টার দিকে খবর আসে জোবায়ের নদীতে পড়ে গেছে। ভোর থেকে শুরু করে পর দিন নদে অনুসন্ধান করেও কোনও খোঁজ মেলেনি। ঘটনার একদিন পর শুক্রবার দুপুর ১২ টার দিকে নৌবন্দরের পন্টুনের দক্ষিণে জোবায়েরের লাশ ভেসে ওঠে। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়।
জোবায়েরের বাবা আব্দুল জলিল বলেন, ‘আমার ছেলেকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে শহরের বিভিন্ন স্থানে ঘোরাফেরা শেষে তাকে মেরে ফেলা হয়। এরপর লাশ নদে ফেলে দেয় খুনিরা। ঘটনার রাতে তারা একসঙ্গে ঘোরাফেরা করেছে। অনেকে তা দেখেছে। এমনকি রাত ১টার দিকে তারা একসঙ্গে ফিলিং স্টেশনে গিয়ে মোটরসাইকেলে তেলও নিয়েছে। এরপরই অজ্ঞাত কোনও স্থানে নিয়ে আমার ছেলেকে হত্যা করে তার লাশ নদীতে ফেলে দিয়েছে। তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল।’
ছেলে হারা এই বাবা আরও বলেন, ‘স্বচ্ছ ও জায়েদকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই তারা হত্যার কারণসহ আসল ঘটনা বলে দেবে। আমার নিরপরাধ ছেলেকে তারা কেন হত্যা করেছে সেটা আমিও জানতে চাই। এর পেছনে প্রভাবশালী কারও হাত থাকতে পারে। আমি ন্যায় বিচার চাই।’
‘বাবা হয়ে সন্তান হারানোর ব্যথা সহ্য করা কত কষ্টের সেটা আমি বোঝাতে পারবো না। যার হারায় সেই বোঝে,’ যোগ করেন নিহতের বাবা।
চিলমারী নৌ পুলিশ ফাঁড়ির এসআই ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) নাজমুল হক বলেন, ‘নিহতের গলায় কালচে দাগ ও মাথার পেছনে দুটি গর্তের মতো চিহ্ন পাওয়া গেছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে। আসামিরা পলাতক। তাদের গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে।’
ঘটনার রাতে নিহতের সঙ্গে অভিযুক্তদের মোবাইল নম্বরের অবস্থান নিশ্চিত হওয়ারও চেষ্টা চলছে বলে জানান আইও।
Leave a Reply