সাগর আহমেদ জজ,
নেত্রকোনা প্রতিনিধি:-
নেত্রকোণার মোহনগঞ্জে ঘরে ঢুকে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ চেষ্টা বাধা দেওয়ায় স্কুলছাত্রীর গলা ও ঠোটে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায় বখাটে।
পরে স্থানীয়রা রক্তাক্ত অবস্থায় আহত সাগরিকাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। ছুরিকাঘাতে তার ঠোট ও জিহ্বা কেটে যাওয়ায় ঠোটে ৬টি ও গলায় দুটি সেলাই লেগেছে। ফলে কথা বলতে পারছেনা এই স্কুল শিক্ষার্থী।
ভুক্তভোগী স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। পরিবারের তিন ভাই বোনের মধ্যে সবার বড় সাগরিকা। তার বাবা পেশায় একজন জেলে হাওরে মাছ ধরে বিক্রি করে সংসারের ভরনপোষণ করেন অঞ্জন।
সাগরিকা দাস (১৫) মোহনগঞ্জ উপজেলার (আর্দশনগর) ৬নং সুয়াইর ইউনিয়নের ভাটিয়া মাঝি পাড়া গ্রামের অঞ্জন দাসের মেয়ে।
রবিবার (২৩ জুন) ভোর ৪ টা ৩০ মিনিটের দিকে নিজ ঘরে সাগরিকা দাস (১৫) কে ধর্ষণ চেষ্টা চালায় এ সময় বাধা দেওয়ায় তাকে গলা ও ঠোটে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায় বখাটে উত্তম।
এ ঘটনায় মোহনগঞ্জ থানায় ভুক্তভোগী সাগরিকা দাসের মা অঞ্জনা রানী দাস বাদী হয়ে উত্তমকে আসামী করে ধর্ষণ চেষ্টা ও হত্যা চেষ্টার মামলা দায়ের করেন।
অভিযুক্ত মামলার আসামী উত্তম বিশ্বাস (২১) উপজেলার ভাটিয়া মাঝি পাড়া গ্রামের নিরঞ্জন বিশ্বাসের ছেলে। তবে স্থানীয়রা বলেন উত্তম বিবাহিত।
শিক্ষার্থীর মা অঞ্জনা রানী দাস বলেন, উত্তম একটা চরিত্রহীন ছেলে। সে আগে আমার ভাসুরের মেয়েকে উত্যক্ত করত। কিছুদিন ধরে আমার মেয়েকে উত্যক্ত করা শুরু করেছে। ভোরে আমরা মাছ ধরতে গেলে সেই সুযোগে ঘরে ঢুকে ধর্ষণ চেষ্টা চালায়। আমার মেয়ে বাধা দেওয়ায় গলা ও ঠোটে ছুরিকাঘাত করেছে। আমি এ ঘটনার ন্যায় বিচার চাই। গরীব মানুষ মাছ বিক্রি করে সংসার চালাই। কষ্ট করে মেয়েটাকে স্কুলে পড়াচ্ছি। মেয়েটার পড়াশোনা যেন চালিয়ে যেতে পারে সেই ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাই। ঘটনার পর থেকে স্থানীয় প্রভাবশালীরা চাপ দিচ্ছে ঘটনা গ্রাম্য সালিশের মাধ্যমে শেষ করতে। এ নিয়ে খুব ভয়ে আছি।
সাগরিকার বাবা অঞ্জন দাস বলেন, অনেকে আপোষের জন্য চাপ দিচ্ছিল। ভয়ে রোববার মেয়েটাকে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে নিয়ে এসেছি। আমরা গরীব মানুষ এতকিছু বুঝি না, এই ঘটনার বিচার চাই।
স্থানীয় ইউপি সদস্য সেবক সরকার বলেন, ভোরেই মেয়ের বাবা-মা বিষয়টা আমাকে জানায়। আমি প্রথমে মেয়েটার (সাগরিকা) চিকিৎসা করাতে তাদের বলি। পরে আসামি পক্ষ আমার কাছে এসে বলে স্থানীয়ভাবে সালিশের মাধ্যমে বিষয়টি শেষ করার জন্য। সাগরিকার স্কুলের প্রধান শিক্ষক দিলাল মিয়াসহ আমরা বিষয়টি সালিশের মাধ্যমে শেষ করার উদ্যোগ নিলেও মেয়ের বাবা-মা তা মানেনি। তারা মামলা দায়ের করেছে।
এ বিষয়ে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দিলাল মিয়া বলেন, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।
মামলার বরাতে মোহনগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, উত্তম বিশ্বাস বখাটে প্রকৃতির ছেলে। সে বিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও এলাকার বিভিন্ন মেয়েদের উত্যক্ত করে। ওই মেয়েটিকেও স্কুলে যাওয়ার পথে নানা কুপ্রস্তাব দিত। এতে রাজি না হওয়ায় ক্ষিপ্ত হয় উত্তম। রোববার সকালে মেয়েটির বাবা-মা বাড়ির বাইরে ছিলেন। এসময় ঘুমে ছিল মেয়েটি ও তার ভাই-বোনেরা। এ সুযোগে ঘরে ঢুকে মেয়েটির গলায় ছুরি ধরে ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। বাধা দিলে তার গলায় ও ঠোটে ছুরি দিয়ে আঘাত করে পালিয়ে যায় উত্তম।
ওসি আরও বলেন, স্থানীয়রা মেয়েটিকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠায়। এ ঘটনায় মেয়েটির মা (২৪ জুন) রোজ সোমবার থানায় মামলা করেন। আসামীকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
মঙ্গলবার (২৫ জুন) সন্ধ্যায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রেজওয়ানা কবির বলেন, এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
Leave a Reply