মাহিদুল ইসলাম ফরহাদ
চাঁপাইনবাবগঞ্জ, জেলা প্রতিনিধি:
মহানন্দা নদী থেকে অবৈধভাবে মাটি উত্তোলন বন্ধ করেছে গ্রামবাসী ও জমির মালিকরা। দুপুরে সদর উপজেলার অনুপনগর ইউনিয়নের ফারুকপাড়ায় মহানন্দা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু-মাটি উত্তোলন বন্ধ করে একই উপজেলার দেবিনগর ইউনিয়নের বাসিন্দারা। এসময় তারা অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের নিয়ে বসে আর বালু-মাটি উত্তোলন না করার জন্য নির্দেশনা দেন।
জানা যায়, গত প্রায় এক সপ্তাহ মহানন্দা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু ও মাটি উত্তোলন করছিল একটি বালুখেকো সিন্ডিকেট। ফসলী জমি থেকে তারা এসব বালু-মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছিলো। এতে জমির মালিকরা বাধা দিতে গেলে উল্টো তাদেরকেই নানারকম ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে আসছিল বালুখেকোরা।
দেবিনগর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দা ও জমির মালিক রবিবার বিকেলে অবৈধভাবে বালু মাটি উত্তোলন বন্ধ করতে যায়। পরবর্তীতে সোমবার দুপুরে মহানন্দা নদীর তড়পা ঘাটে অবৈধভাবে বালু ও মাটি উত্তোলনের সাথে জড়িতদের নিয়ে আলোচনায় বসে। এসময় তারা অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কথা স্বীকার করে। পরে গ্রামবাসীদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এখন থেকে মহানন্দা নদীতে আর কোন বালু উত্তোলন করা যাবে না। করলে তা আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস করার সীধান্ত নেয় গ্রামবাসী।
ধুলাউড়ি হাট গ্রামের তরিকুল ইসলাম জানান, এখানে কোন বৈধ বালুমহল নেই। অথচ একটি প্রভাবশালী মহল জোরপূর্বক আমাদের জমি কেটে নিয়ে যাচ্ছিলো। বাধা দিতে গেলেই আমাদেরই উল্টো নানারকম ভয়ভীতি ও হুমকি দিচ্ছিলো তারা। তাই বাধ্য হয়েই আমরা নিজেরা বাধা দিয়ে থামিয়েছি।
স্থানীয় বাসিন্দা আজিম উদ্দিন বলেন, নদীতে থাকা ফসলী জমি কেটে নিয়ে যাওয়ায় তা চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে গেছে। পাশাপাশি ভাঙনের ঝুঁকি বেড়েছে কয়েকগুন বেশি। এমনিতেই প্রতিবছর ভাঙনে আমরা সর্বশান্ত হয়। এরমধ্যেই এভাবে অবৈধভাবে নদী থেকে বালু মাটি উত্তোলন করলে আমরা আরও বিপদে পড়ে যাব।
কৃষক মাসুদ রানা জানান, ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে তারা জোরপূর্বক নদী থেকে বালু মাটি উত্তোলন করছিল। এবিষয়ে আমরা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডে যোগাযোগ করলে জানতে পারি, তাদের কোন অনুমতি নেই। এমনকি পুরো মহানন্দা নদীতে কোন বালুমহল ইজারা দেয়নি জেলা প্রশাসন। তবুও জোরপূর্বক তারা এভাবে কৃষকদের ফসলী জমি কেটে নিয়ে যাচ্ছিলো।
এবিষয়ে অবৈধ বালু-মাটি উত্তোলনকারী আকবর আলী বলেন, ২০১৯ সালে নদী ড্রেজিংয়ের বালু ইজারা নেয় তার ব্যবসায়িক সহযোগী করিম নামের ব্যক্তি। এসব বালু উত্তোলন করতে না পারায় তারা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবহিত করে বালু-মাটি উত্তোলন শুরু করে। এরপরই এতে বাধা দেয় স্থানীয়রা। তবে এসব বালু মাটি উত্তোলনের কোন অনুমোদন রয়েছে কি না ও ২০১৯ সালের ইজারা নেয়া বালু ৫ বছর পর কেন উত্তোলন করছেন, তা জানতে চাইলে এর কোন সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. ময়েজ উদ্দিন জানান, মহানন্দা নদীর তড়পা ঘাট এলাকায় কোন বালুমহল নেই। এমনকি সেখানে বালু ও মাটি উত্তোলনের কোন অনুমোদন দেয়া হয়নি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাছমিনা খাতুন জানান, মহানন্দা নদী থেকে অবৈধভাবে বালুমাটি উত্তোলন করলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে বালু-মাটি উত্তোলন রোধ করা হবে।
Leave a Reply