আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-
শনিবার, ১ জুন ২০২৪ ইং ১২:০১ এএম.
‘মোর হাঁপানি রোগ। তিন দিন হাসপাতালোত আসনু। ডাক্তার না পায়া ঘুরি ঘুরি যাই। ওমরা বলে, এমবিবিএস ডাক্তার নোয়ায়। পরীক্ষা করবার পায় না। বাইরা ডাক্তার দ্যাখামো, ৬০০-৭০০ ট্যাকা নাগে। গরিব মানুষ কোটে পামো এতো ট্যাকা।’ কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে এসে কথাগুলো বলছিলেন হাতিয়া চর গুজিমারির বাসিন্দা গেন্দলা শেখ।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, আউটডোরে রোগী গিজগিজ করছে। চিকিৎসা কর্মকর্তার কক্ষে চিকিৎসক নেই। রোগী দেখছেন তিনজন উপসহকারী মেডিকেল অফিসার (স্যাকমো)। উপসহকারী মেডিকেল অফিসার আলম চান্না বলেন, চিকিৎসা কর্মকর্তা বসেন না। তারা রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন।
নদীবেষ্টিত উলিপুরে ১৩টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার পাঁচ লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় ভরসা ৫০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। তবে চিকিৎসক ও ওষুধ সংকট কাটছেই না। এক্স-রে ও আলট্রাসনোগ্রাম যন্ত্র এবং অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা থাকলেও টেকনিশিয়ান ও সার্জারি চিকিৎসক নেই। ফলে যন্ত্রগুলো নষ্ট হচ্ছে। এতে দরিদ্র মানুষ কম খরচে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। প্রতিদিন এখানে ৩০০ থেকে ৪০০ এবং আন্তঃবিভাগে অন্তত ৬০ জন চিকিৎসা নিতে আসেন।
সূত্র জানায়, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও কেন্দ্রগুলোতে পদ রয়েছে ২১৪টি। এর মধ্যে কর্মরত ১২৬ জন। শূন্য পদ রয়েছে ৮৮টি। চিকিৎসকের ২৭টি পদ থাকলেও কর্মরত মাত্র তিনজন। ৩৬ নার্সের পদে আছেন ৩৪ জন। টেকনিশিয়ানের ১৩টি পদের বিপরীতে চারজন রয়েছেন। প্রধান সহকারী কাম হিসাবরক্ষক, ক্যাশিয়ার, ওয়ার্ড বয়, আয়াসহ তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর ১৩৮টি পদের ৭০টিই শূন্য। কর্মরত ৮১ জন।
জুনিয়র কনসালট্যান্ট (মেডিসিন), গাইনি, অ্যানেসথেশিয়া, অর্থো সার্জারি, কার্ডিওলজি, শিশু, নাক, কান ও গলা এবং চক্ষু, চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞসহ সহকারী সার্জনের পদে আগে চিকিৎসক নিয়োগ হয়েছে। তবে তারা বদলি হয়ে চলে গেছেন। এদিকে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রে একজন করে মেডিকেল অফিসারসহ পদ রয়েছে ১৫টি। এর মধ্যে কর্মরত ১১ জন। পদ শূন্য রয়েছে চারটি।
এক্স-রে যন্ত্রটিও দুই বছরের বেশি সময় বিকল। ডিজিটাল আলট্রাসনোগ্রাম যন্ত্রেরও একই অবস্থা। ফলে স্বল্প খরচে পরীক্ষা করতে পারছেন না চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কার্যক্রম জোড়াতালি দিয়ে চলছে। ৫০ শয্যার হলেও ডায়রিয়া বা কভিডের জন্য আলাদা ওয়ার্ড বা কেবিন না থাকায় তাদের সাধারণ রোগীদের সঙ্গে রাখা হচ্ছে। চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের বাইরে থেকে পরীক্ষা করতে হয়।
এত বড় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মাত্র তিনজন চিকিৎসক আছেন জানিয়ে নার্সিং সুপারভাইজর মোছা. মাহবুবা বলছিলেন, আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ওয়ার্ডে রোগী দেখেন। ব্যস্ত থাকেন দাপ্তরিক কাজে। নার্সদের জরুরি বিভাগসহ সব কাজ করতে হয়। ফলে ওয়ার্ডের রোগীর সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
চিকিৎসা নিতে আসা তবকপুর গ্রামের রহমত আলী (৬০) ও সাতভিটা গ্রামের ইছিমন বেওয়ার (৫৫) ভাষ্য, এখানে এক্স-রে করলে ১৫০ টাকায় হতো। বাইরে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা খরচ হয়। বাধ্য হয়ে বেশি টাকা দিয়ে এক্স-রে করতে হচ্ছে।
চিকিৎসক ও কর্মচারী সংকটে কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসাসেবা দেওয়া যাচ্ছে না জানিয়ে ভারপ্রাপ্ত আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা মেহেরুল ইসলাম বলেন, এক্স-রে যন্ত্র দীর্ঘদিন ধরে অকেজো। নালা না থাকায় বৃষ্টি হলেই পানিতে সয়লাব হয়ে যায় চত্বর। এতে রোগীদের দুর্ভোগ বেড়ে যায়।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা প্রশিক্ষণে থাকায় এ পদে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন শুভজিত ভট্টাচার্য। তিনিও একই ধরনের তথ্য জানিয়ে বলেন, সহকারী সার্জন না থাকায় অস্ত্রোপচার ও এক্স-রে করা যাচ্ছে না। জনবল সংকট দূরীকরণ ও এক্স-রে যন্ত্র মেরামতের জন্য স্বাস্থ্য বিভাগে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
Leave a Reply