মো: সিরাজুল ইসলাম পলাশ
স্টাফ রিপোর্টার:-
খরচ কম লাভ বেশি হওয়ায় ক্রমেই বাড়ছে লালমনিরহাটে ভুট্টা চাষীর সংখ্যা। প্রাপ্ত তথ্যমতে জেলায় ১৯৮৬-৮৭ অর্থবছরে মাত্র ৪০ একর জমি দিয়ে ভুট্টা চাষ শুরু হয়। এরপর থেকে ধীরে ধীরে পাটগ্রাম-হাতীবান্ধা অঞ্চলে ভুট্টা চাষ বাড়তে থাকে।
বর্তমানে জেলার ব্রান্ডিং নাম ‘ভুট্টায় ভরা সবার ঘর, লালমনিরহাট স্বনির্ভর’। জেলার ব্রান্ডিং ফসল ভুট্টা হলেও এখনো গড়ে ওঠেনি ভুট্টা প্রসেসিং কেন্দ্র ও সংরক্ষণাগার। এতে ভুট্টার ফলন ভালো হলেও ন্যায্য মূল্য নিয়ে হতাশায় থাকতে হয় চাষীদের।
কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর সমতল ও চরাঞ্চলে উৎসাহ নিয়ে লাখো কৃষক ৩২ হাজার ৯১০ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড জাতের ভুট্টা চাষ করেছেন।
জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার ভুট্টা চাষী রিফাত মিয়া বলেন, গত পাঁচ বছর ভুট্টা চাষ করছি। ভুট্টা চাষে কম খরচে বেশি লাভ হয়। লালমনিরহাটের ব্রান্ডিং ফসল ভুট্টা হলেও ভুট্টা সংরক্ষণাগার ও ভুট্টা প্রসেসিং কেন্দ্র নেই। ফলে খেত থেকে ভুট্টা ঘরে তুলেই স্বল্প লাভে বিক্রি করতে হয়। এতে মধ্যস্থতাকারীরা কৃষকের চেয়ে বেশি লাভবান হয়।
আদিতমারী উপজেলার দূর্গাপুর এলাকার ভুট্টা চাষী আজিজার রহমান বলেন, ভুট্টা চাষ করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন; তবে যে লাভ কৃষকের হওয়ার কথা সেটি থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে ভুট্টা নির্ভর শিল্প কারখানা না থাকায়।
একই এলাকার আকবর হোসেন বলেন, বর্তমানে সার, বীজ ও দিনমজুরের মজুরি ঊর্ধ্বমুখী তাই ভুট্টা চাষে ব্যয় বেড়েছে। এ ছাড়া ভুট্টা সংরক্ষণ করে দেরিতে অধিক মূল্যে বিক্রি করার পদ্ধতি নেই এখানে। লালমনিরহাটে ভুট্টা নির্ভর কারখানা বা ভুট্টা সংরক্ষণ করে রাখার ব্যবস্থা থাকলে কৃষকরা অধিক লাভবান হতো।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর লালমনিরহাটের প্রশিক্ষণ অফিসার কৃষিবিদ মো. শাহ্ আলম বলেন, জেলার জমি ভুট্টা চাষ উপযোগী হওয়ায় ফলন বেশি হচ্ছে। এতে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। এবছর ইতোমধ্যে ৭০% ভুট্টা কর্তন করা হয়েছে। কৃষকরা নিজেদের গুদামে ভুট্টা সংরক্ষণ করে থাকে; এই জেলায় তেমন কোনো ভুট্টা সংরক্ষণাগার নেই। আমরা কৃষকদের সকল ধরনের পরামর্শ দিয়েছি। অনেক কৃষক তামাক চাষ পরিহার করে ভুট্টা চাষে মনোযোগী হয়েছেন।
লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, লালমনিরহাটে একটি ভুট্টা প্রসেসিং কেন্দ্রের প্রয়োজন। আমরা ইতোমধ্যে ভুট্টাকে কেন্দ্র করে একটি প্রস্তাবনা রেখেছি। যাতে কৃষকরা ভুট্টাগুলো যথা নিয়মে প্রসেস করতে পারে। স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ী ভুট্টা নির্ভর শিল্প কারখানা গড়ে তোলার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি। প্রয়োজনে তাদের বিসিকে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হবে।
বাংলাদেশের শিল্পপতি ও উদ্যোক্তাদের আহ্বান করে জেলা প্রশাসক আরও বলেন, লালমনিরহাটে কোনো শিল্পপতি ও ব্যবসায়ী ভুট্টা নির্ভর প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে চাইলে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে।
Leave a Reply