আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-
কুড়িগ্রাম শহরের কলেজ মোড়ে অবস্থিত জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগার। এখানে পাঠকদের সরব উপস্থিতি থাকলেও ভবনের পিলারসহ বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দেওয়ায় আতঙ্ক নিয়ে বই পড়তে হয়। পাশাপাশি গ্রন্থাগারের শৌচাগারের বেহাল দশা ভোগান্তি বাড়িয়েছে কয়েকগুণ। তবে বইয়ের পর্যাপ্ত সংগ্রহ নিয়ে সন্তুষ্ট পাঠক।
জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগারে গিয়ে দেখা গেছে, ভবনের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। পিলার ও দেয়ালে ফাটল ধরায় কক্ষগুলোর মেঝে দেবে গেছে। ফাটলের কারণে একটি পাঠকক্ষ বন্ধ রেখেছে কর্তৃপক্ষ। ওই কক্ষের দেয়ালের টাইলস ভেঙে পড়েছে। অডিটরিয়াম কক্ষ বিকল্প পাঠকক্ষ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। সাধারণ ওয়াশব্লকের দরজায় বাঁশ দিয়ে কোনো রকমে ব্যবহার উপযোগী রেখেছে কর্তৃপক্ষ।
গ্রন্থাগার কর্তৃপক্ষ জানায়, বর্তমান ভবনটি ২০১১ সালে তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল। এর কয়েক বছরের মাথায় বিভিন্ন অংশে ফাটল দেখা দেয়। বিষয়টি গ্রন্থাগার অধিদফতরকে জানানো হলেও সংস্কারে কোনও উদ্যোগ নেয়নি। দিনদিন ফাটলের পরিমাণ বাড়লে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে ভবনটি। যেকোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন পাঠক এবং দায়িত্বরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
গ্রন্থাগারে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা জানান, এখানে ৩৩ হাজারের বেশি বই আছে। সরকারিভাবে বই সরবরাহ ছাড়াও পাঠকদের চাহিদার ভিত্তিতে স্থানীয়ভাবে বেশ কিছু বই সংগ্রহে রাখা হয়েছে। এসব বইয়ের মধ্যে চাকরিপ্রত্যাশী পাঠকদের বইসহ সৃজনশীল সাহিত্যকর্মের সংগ্রহকে অগ্রাধিকার দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
সোমবার (০৫ ফেব্রুয়ারি) গ্রন্থাগারে গিয়ে পাঠকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা চাহিদা অনুযায়ী বই পাচ্ছেন। তবে কিছু বইয়ের পুরাতন সংস্করণের কারণে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে ফাটলের কারণে আতঙ্ক নিয়ে পাঠাগারে অবস্থান করতে হয়। ভবনটি সংস্কার করে ঝুঁকিমুক্ত করার দাবি জানান তারা।
গ্রন্থাগারের নিয়মিত পাঠক কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. শাকিল। তিনি বলেন, ‘আমি গ্রন্থাগারে এসে একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি নিয়মিত চাকরির প্রস্তুতির পড়াশোনা করি। কিন্তু এখানের বেশিরভাগ বই পুরাতন সংস্করণের। আপডেট এডিশনের বই রাখলে সবার সুবিধা হতো।’
একই কলেজের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী জীবন সরকার বলেন, ‘গ্রন্থাগারে নিয়মিত আসি। বইয়ের পর্যাপ্ত সরবরাহ আছে। পড়ার পরিবেশ ভালো। তবে সাহিত্যের বইয়ের ঘাটতি আছে। এছাড়া অনেক বই পুরনো।’
আমি গ্রন্থাগারের নিয়মিত পাঠক জানিয়ে আরেক শিক্ষার্থী তাজুল ইসলাম বলেন, ‘একাডেমিক পড়াশোনা ছাড়াও চাকরির প্রস্তুতিমূলক বই পড়ি। কিন্তু গ্রন্থাগারের বিভিন্ন পিলারে ফাটলের কারণে আমরা আতঙ্কে থাকি সবসময়। এগুলো দ্রুত সংস্কার করা প্রয়োজন। না হলে পাঠক কমতে থাকবে।’
ঝুঁকিপূর্ণ ভবন নিয়ে আতঙ্কের কথা জানিয়ে গ্রন্থাগারে পত্রিকা পড়তে আসা লিটন বলেন, ‘ভবনের ফাটল দেখলেই ভয় লাগে। এখানে থাকাকালীন মনের মধ্যে আতঙ্ক কাজ করে। বিষয়টি কর্তৃপক্ষের হালকাভাবে দেখা উচিত নয়। দ্রুত সংস্কার করা দরকার।’
শুধু পাঠক নন, ভবনের ফাটল নিয়ে আতঙ্কে থাকেন গ্রন্থাগারের কর্মচারীরাও। কিন্তু সরকারি চাকরির সীমাবদ্ধতার অজুহাতে গণমাধ্যমে এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি তারা।
গ্রন্থাগারের লাইব্রেরিয়ান কেএম মেহেদী হাসান বলেন, ‘এখানে সব ধরনের বই আছে। প্রতিদিন শতাধিক পাঠক আসেন। ভবনের বিভিন্ন স্থানে ফাটলের বিষয়ে গণপূর্ত বিভাগসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’
ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ও পাঠকদের আতঙ্ক থাকা নিয়ে লাইব্রেরিয়ান বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় একটি পাঠকক্ষ সর্বসাধারণের জন্য সবসময় উন্মুক্ত রাখা সম্ভব হয় না। বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’
প্রসঙ্গত, গ্রন্থাগার পেশাজীবী, প্রকাশক ও পাঠকদের দীর্ঘদিনের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ০৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে সরকার। ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের ৫ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছিল। তাই দিনটিকে জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর মন্ত্রিসভা বৈঠকে প্রতি বছর ০৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস পালনের সিদ্ধান্ত হয়।
Leave a Reply