আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:-
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে কুড়াল দিয়ে স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যায় অভিযুক্ত স্বামী সত্য চন্দ্র শীলকে (৫০) লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলা থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সোমবার (২২ জানুয়ারি) স্ত্রীকে হত্যার কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। ২৬ বছরের দাম্পত্য জীবন অতিবাহিত করার পর কেন স্ত্রীকে হত্যা করেছে সত্য চন্দ্র, সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে পুলিশ।
সোমবার (২২ জানুয়ারি) বিকেলে নিজ কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান, কুড়িগ্রামের পুলিশ সুপার আল আসাদ মো. মাহফুজুল ইসলাম। এর আগে রবিবার (২১ জানুয়ারি) ভোররাতে নিজ ঘরে গৃহবধূ লতা রানী (৪০) হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। নাগেশ্বরী পৌর এলাকার কবিরের ভিটা গ্রামে বসবাস করতো এই দম্পতি।
ঘুমন্ত অবস্থায় সত্য চন্দ্র শীল কুড়াল দিয়ে স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ তাদের দুই ছেলের। ঘটনার পর সত্য চন্দ্র শীল পালিয়ে যায়। ঘরের বিছানার নিচ থেকে রক্তমাখা কুড়াল উদ্ধার করে পুলিশ। পরে আদিতমারী থানা পুলিশের সহায়তায় সীমান্ত এলাকায় ভগ্নিপতির বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
হত্যার ঘটনায় রবিবার নিহতের ভাই বাদী হয়ে সত্য চন্দ্র শীলকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। ওই দিন সন্ধ্যায় আসামিকে গ্রেফতারের পর সোমবার দুপুরে আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ। পরে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। জবানবন্দি গ্রহণ করে আসামিকে কারাগারে পাঠানো হয়।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, সত্য চন্দ্র শীল সেলুনের (নরসুন্দর) ব্যবসা করে। প্রায় ২৬ বছর আগে লতা রানীর সঙ্গে বিয়ে হয়। তাদের দুই ছেলে। স্ত্রী-সন্তানের প্রতি সত্য চন্দ্রের ভালোবাসার কমতি ছিল না। তবে জমি বিক্রি ও ঋণ করা নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে মাঝেমধ্যে কলহ দেখা দিতো।
পুলিশ সুপার জানান, হত্যাকাণ্ডের পর সত্য চন্দ্র পালিয়ে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে আত্মগোপনের পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু তার আগেই গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার কথা স্বীকার করেছে। তবে কী কারণে হত্যা করেছে, তা নিয়ে একেকবার একেক রকম বক্তব্য দিচ্ছে। সবগুলো কারণ খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
হত্যাকাণ্ডের কারণ কী হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে তিনটি ক্লু নিয়ে তদন্ত চলছে। এগুলো হলো পূর্বের অর্থ ঋণ, হতাশা এবং ড্রাগ কিংবা বিভিন্ন মেডিসিনের বিরূপ প্রভাব।’
পুলিশ সুপার বলেন, ‘বাঁ পায়ে বাতের ব্যথাজনিত কারণে আসামি মাত্রাতিরিক্ত স্টেরয়েড জাতীয় ড্রাগ সেবন করতো। এছাড়া ড্রাগ নিতো কিনা তা খতিয়ে দেখছি। এগুলোর কোনও বিরূপ প্রভাব আসামিকে হত্যা করার মতো কাজে উত্তেজিত করেছিল কিনা সে বিষয়ে আমরা বিশেষজ্ঞদের মতামত নেবো।’
আদালতে আসামির দেওয়া জবানবন্দির বরাতে মামলা তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের রাতে আসামি ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমাতে গেলেও ঘুম আসছিল না। এর মধ্যে পায়ে তীব্র ব্যথা শুরু হয়। এ সময় স্ত্রীকে ডাকলে উঠতে অস্বীকৃতি জানায়। তখন অস্থিরতা ও ক্ষোভ থেকে স্ত্রীকে কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে সত্য চন্দ্র।’
নাগেশ্বরী থানার ওসি রূপ কুমার সরকার বলেন, ‘আসামি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। আদালতের নির্দেশে আসামিকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’
Leave a Reply