আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:-
সোমবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩ ইং
কোনো নির্বাচনই বাদ দেন না আব্দুল হাই মাস্টার। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন থেকে শুরু করে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। একবার ইউপি চেয়ারম্যান ও একবার উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।
তাই এবার তাঁর স্বপ্ন জাতীয় সংসদ সদস্য হওয়ার। এলাকার লোকজন তাঁকে ‘ভোটপাগল আব্দুল হাই মাস্টার’ বলেই ডাকে। তাঁর বাইসাইকেলে লাগানো থাকছে বিভিন্ন রঙের কৃত্রিম গোলাপ ফুল, ঝোলানো কাপড়ের ব্যাগ, তার ভেতরে থাকছে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। নির্বাচনী প্রচার করতে গিয়ে যেখানে রাত হচ্ছে সেখানেই কোনো বাড়িতে রাত্রীযাপন করছেন।
পরদিন সেখান থেকে আবার প্রচারণা শুরু করছেন। এভাবেই ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি। স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে ভোটপাগল আব্দুল হাই মাস্টার আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদীয় এলাকা ২৫ কুড়িগ্রাম-১ আসনের জাকের পার্টির গোলাপ ফুল প্রতীক নিয়ে প্রার্থী হয়েছেন। ভূরুঙ্গামারী-নাগেশ্বরী উপজেলা নিয়ে কুড়িগ্রাম-১ আসন।
এই দুটি উপজেলার প্রতিটি গ্রাম-গঞ্জে আব্দুল হাই মাস্টার ভোট চেয়ে ঘুরছেন। বাইসাইকেলে চড়ে নির্বাচনী এলাকা ঘুরে ঘুরে হ্যান্ডমাইকে ভোট প্রার্থনা করছেন।
স্থানীয়রা জানান, আব্দুল হাই মাস্টার চারবার ইউপি চেয়ারম্যান পদে, চারবার উপজেলা চেয়ারম্যান পদে এবং চারবার জাতীয় সংসদের সদস্য পদে নির্বাচন করেছেন। এর মধ্যে একবার তিনি বঙ্গসোনাহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এবং ২০০৯ সালে ভূরুঙ্গামারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন। এ সময় স্থানীয় জনসাধারণ নগদ টাকা, বাড়ি বাড়ি চাল ও মুড়ি তুলে তাঁকে সহায়তা করেছিলেন।
উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি বেশির ভাগ সময় ড্রেন পরিষ্কার ও রাস্তাঘাট ঝাড়ু দিয়ে মানুষের আলোচনায় এসেছেন। সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল হাই মাস্টার স্কুলশিক্ষক ছিলেন। গত বছরের অক্টোবর মাসে তিনি উপজেলার চর ভূরুঙ্গামারী উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন।
আব্দুল হাই মাস্টার বলেন, ‘সর্বশেষ ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাকের পার্টির প্রার্থী হয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে (নাগেশ্বরী ও ভূরুঙ্গামারী) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছি। এবারও জাকের পার্টির প্রার্থী হিসেবে গোলাপ ফুল মার্কা নিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছি। নির্বাচন আমি শেষ পর্যন্ত লড়ে যাব, কোনো বাধাই আমাকে আটকাতে পারবে না।’
তিনি বলেন, ‘চেয়ারম্যান হয়েছি, উপজেলা চেয়ারম্যানও হয়েছি। বাকি আছে জাতীয় সংসদ সদস্য হওয়ার। গত এক বছর থেকে নির্বাচনী প্রচারণার কাজ শুরু করেছি এবং প্রতিটি এলাকায় জনগণের বিপুল সাড়াও পাচ্ছি। আমি বুঝতে পারছি, আল্লাহ আমার ইচ্ছা পূরণ করবে এবং আমাকে এমপি বানাবে।’
ভোটারদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমি এমপি নির্বাচিত হলে দুধকুমার নদের পাড়ে একটি নদীবন্দর স্থাপন, মাধ্যমিক শিক্ষকদের এককালীন পেনশন ব্যবস্থা সহজীকরণ, নদীভাঙন রোধসহ বিভিন্ন সমস্যা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে মহান জাতীয় সংসদে বিল উত্থাপন করে পাসের চেষ্টা করব।’
আব্দুল হাইয়ের প্রচারণা শুনতে আসা জাহাঙ্গীর জুয়েল, আব্দুর রহমান, শাহজাহান আলী, লিয়াকত আলী ও সবুর মিয়া বলেন, মানুষ আব্দুল হাইকে পাগল বলুক আর যা-ই বলুক, আমরা উপজেলা নির্বাচনের সময় যেমনভাবে তাঁকে ভোট দিয়েছি এবার সংসদ নির্বাচনে আমাদের এলাকার লোক হিসেবে আমরা তাঁকে ভোট দিয়ে জাতীয় সংসদে পাঠাব। যাতে তিনি এলাকার মানুষের সেবা করতে পারেন এবং আমাদের মতো গরিব মানুষের মনের কথাগুলো মহান সংসদে উত্থাপন করে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেন।
উল্লেখ্য, এবারের নির্বাচনে আব্দুল হাই মাস্টারের সাথে ভোটে লড়ছেন গত তিনবারের এমপি জাপা মনোনীত প্রার্থী এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক (লাঙল), বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশনের কাজী লতিফুল কবীর রাসেল (ফুলের মালা), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির নুর মোহাম্মদ (আম) ও বাংলাদেশ কংগ্রেসের মনিরুজ্জামান খানা ভাসানী (একতারা)।
Leave a Reply